এনজিওর স্বরূপ কেমন? – সফিকুল ইসলাম
এনজিও মানে নামে বেসরকারি
কাজে সরকারি জনসেবা ক্ষেত্রের ভিন্নরূপ নাটাই।
করার কথা পরিপুরক হিসেবে শূন্যস্থান পূরণ,
করে পুনরাবৃত্তি, দ্বিগুন ত্রিগুন।
সরকার এনজিও চালায় না,
সরকারকে যারা চালায় তারা এনজিও চালায়।
সহজ কথায় যেসব এলিট সরকারের ডানহাত বাহাত
তারাই এনজিওর মেরুদন্ড।
সরকারের হাত অনেক লম্বা,
এনজিওদের হাত আরও অনেক লম্বা।
এনজিও মানে, নামে অলাভজনক,
কাজে লাভের রমরমা ব্যবসা,
পরতে পরতে সাজানো পিপাসা আর লিপ্সা।
সরকারি কাজের হিসাব প্রতিবেদনে গড়মিল থাকতে পারে
এনজিও হিসাব আর প্রতিবেদনে পাক্কা। একশ তে একশ।
হিসাবটাই পুঁজি আর সব ফাঁকা বুলি ও প্রতিবেদনের কৌশল।
এই যেমন ধরুন, একটি জেলায় স্যানিটেশন এ বছর শতকরা ত্রিশ।
তিনবছর এনজিওটি কাজ করার পর
এ হার নব্বই হলে তার সবটুকু কৃতিত্ব
এনজিও তার পকেটে নিয়ে নেয়। স্ব-উদ্যোগ,
গ্রামের ইমাম-পুরোহিতের চেষ্টা,
দানশীল ব্যক্তির উদ্যোগ, স্থানীয় সরকারের উন্নয়ন
আর সরকারের মহাযজ্ঞ কোনকিছুরই
ভূমিকা থাকে না প্রতিবেদনে। থাকলেও তা নামমাত্র কারণ
তাদের প্রতিবেদন প্রতিভা নেই, আর সরকারের থাকলেও কী!
সরকার তো করবেই। এ আর এমন কী!
এনজিও খেলা মহাখেলা। এখানেও আপনার ডানপন্থী-বামপন্থী আছে।
সাদা-নীল আছে, শিয়া-সুন্নী আছে, ক্যাথলিক-প্রোটেস্টেন্ট আছে,
পূর্ব-পশ্চিম আছে, ব্রাহ্মণ-নমশুদ্ আছে।
টাকা আসে টাকা যায়, যাদের খাওয়ার আরামে খায়।
মাঝখানে ছক্কা মেরে ছো মেরে ধায়।
অবাক করার বিষয় হলো,
নারী অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন
এনজিওর নারী কর্মকর্তা শতকরা বিশ ভাগের কম।
থাকলেও তা অধস্তন পর্যায়ে।
এনজিও চালায় যারা, তারাই ভালো জানে;
এনজিওর সেবা, বিশ্বের সেরা সেবা।
কেন্দ্রে বসে প্রত্যন্ত পাহাড়ের সমস্যা জানে অনায়াসে
এসিরুমে বসে নির্ভুল প্রতিবেদন লিখে ঠেকাবে কে?
কৈ এর তেলে কৈ ভাজে, সেই ভাজা পাতে রেখে ছবি তুলে
বিশ্ব ছড়ায়, বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়, রুখবে কে?
যেন ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না।
রাজনীতিতে এনজিও আছে, আবার এনজিওতেও রাজনীতি আছে।
অর্থনীতিতে এনজিও আছে, আবার এনজিওতেও অর্থনীতি আছে।
সম অধিকার, সম-বন্টন কাগজে লেখা আছে, কাজে নেই।
ফান্ডিং অথরিটির ইচ্ছা-অভিপ্রায়ই চূড়ান্ত কথা
কমিউনিটির প্রয়োজন, অধিকার সব কাগুজে নীতিকথা।
এনজিও সরকারের প্রশাসনিক শৃংখলার কথা বলে প্যানপ্যান করে।
অথচ নিজেরই শৃংখলা নেই,
চেইন অব কমান্ড নেই, সুষম বন্টন নেই, জবাবদিহীতা নেই।
এনজিও অন্যের স্বচ্ছতা নিয়ে কথা বলে ফেনা তুলে
এনজিওর কাগজে স্বচ্ছতা থাকলেও কাজে ঘুটঘুটে অন্ধকার।
যতসব বায়বীয় ধোঁয়া আর বাগাড়ম্বর রচনা।
এনজিওর জবাবদিহীতা নিজেরা নিজেদের কাছে।
মামারটা খালুর কাছে। খালুরটা মামার কাছে।
কমিউনিটি রাজনতিবিদকে ধরতে পারে, স্থানীয় সরকারকে ধরতে পারে,
আমলাকে ধরতে পারে। এনজিও কে ধরতে পারে না।
তাছাড়া কমিউনিটি মনে করে যা পাইছি তাই ফাউ,
প্রতিবাদ করে কী লাভ!
চুপ থাকাই ভলো, না হলে যা পেয়েছি তাও যাবে।
আমও যাবে ছালাও যাবে।
সরকারি নজরদারী ভাসাভাসা না থাকার মতো
ছাই দিয়ে ধরার উপায় নেই, অনেক ফাঁকে পিছলে যায়।
যারা এনজিওর লোক। তারা নয় উজবুক।
আহড়ণে যত আগ্রহ বিতরণে তত না।
সাগর পেলে নদী দেয়, নদী পেলে পুকুর দেয়।
মনে রাখবেন, আহরণ করা হয় গরীবদের জন্য, কমিউনিটির জন্য।
আহরণকারী বা বিতরণকারীদের জন্য নয়।
অর্ধেকের বেশি যায়, আহরণকারী আর বিতরণকারীদের পকেটে,
তাঁরা কিন্তু গরীব না!
বুদ্ধিজীবীরা একদিকে এনজিওর প্রশংসায় মুখে ফেনা তুলেন
আরেকদিকে এনজিওর ভাগাভাগির ধোঁয়ায় সুখটান দেন।
.
বাংলাদেশে এনজিও (NGO – Non-Governmental Organization) বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক, এবং উন্নয়নমূলক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরা সাধারণত সরকারের বাইরে থেকে কাজ করে এবং দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি: শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, নারীর ক্ষমতায়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ, মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার, উন্নয়ন গবেষণ ও নীতি প্রণয়ন ইত্যাদিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এনজিওগুলো সরকারের উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে সম্পূরক হিসেবে কাজ করে এবং সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। তাদের এই ভূমিকা দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতিতে অনস্বীকার্য।
যেসব ইউটোপিয়ান স্লোগান নিয়ে এনজিওগুলো মাঠেঘাটে কাজ করে, বাস্তবেও প্রকৃত অর্থে সেরকম ভূমিকা রাখা উচিত। এনজিওগুলো অবশ্যই সরকারের পরিপুরক হিসেবে কাজ করতে পারে। এনজিওগুলো নিজেদের প্রতিষ্ঠানের ভিতরে আগে সুশাসন নিশ্চিত করাই সমীচীন। এবং প্রাপ্ত তহবিলের সিংহভাগ যে উদ্দেশ্যে আনা হয় , সে উদ্দেশ্যে ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত। সেটা অর্জিত হলেই কেবল এনজিওগুলোর স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে ও সমালোচনা বন্ধ হবে।
