Detail

Home - সাহিত্যকর্ম - বুক রিভিউ - নির্বাচন সংক্রান্ত কিছু বিখ্যাত/ ক্লাসিক বইয়ের ‘বুক রিভিউ’

নির্বাচন সংক্রান্ত কিছু বিখ্যাত/ ক্লাসিক বইয়ের ‘বুক রিভিউ’

১।

Pippa Norris এর ’’Why Elections Fail’’ বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০১৫ সালে Cambridge University Press থেকে। এ বইয়ের মূল বিষয় হলো কেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্বাচন গণতন্ত্রের মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়- তার কারণ, ধরন ও সমাধান বিশ্লেষণ করা।

.

তিনি বলেছেন গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন। কিন্তু অনেক দেশে নির্বাচন শুধু ’আনুষ্ঠানিকতা’ জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে না। তিনি বলেন, নির্বাচনী সততা গণতন্ত্রের মান নির্ধারণ করে। একটি দেশের নির্বাচনের মান নির্ভর করে দেশের আইনি কাঠামো, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা, ভোটারদের সমান সুযোগ, ও ফলাফল গ্রহণযোগ্যতার ওপর।

.

তিনি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে একটি চক্র (cycle) হিসেবে দেখান, যার তিন ধাপ রয়েছে। নির্বাচনের পূর্বে যেখানে আইন, সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা, প্রার্থী মনোনয়ন হয়; নির্বাচনের দিন যখন ভোটগ্রহণ, নিরাপত্তা, গণনা করা হয়; আর নির্বাচানের পরের পর্ব যখন ফল ঘোষণা, আপত্তি নিষ্পত্তি, ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়। প্রতিটি ধাপেই অনিয়ম ঘটতে পারে। যেমন ভোটার তালিকা বাদ, প্রার্থীকে হয়রানি, ভোট বাক্স দখল, ফলাফল বদল ইত্যাদি।

.

এ বইয়ে লেখক ১৫০টিরও বেশি দেশের নির্বাচনের মান বিশ্লেষণ করে একটি সূচক তৈরি করেন যা Perceptions of Electoral Integrity Index (PEI) নামে পরিচিত। যেখানে  উচ্চ মান  (স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন), মধ্যম মান (মোটামুটি চলনসই অবস্থা) ও নিম্ন মান (কারচুপি, পক্ষপাত বা সহিংসতা) এ তিনটি ভাগে ভাগ করে দেখিয়েছেন। তিনি দেখান যে, নির্বাচনের মান দেশের উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য এবং প্রাতিষ্ঠানিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত।

.

নির্বাচন ব্যর্থ হয় তিনটি স্তরে। এক, Institutional Failure যেমন দুর্বল বা পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন; দুই, Procedural Failure যেমন ভোটগ্রহণে অনিয়ম, ভয়ভীতি, ভোট কেনাবেচা; তিন, Behavioral Failure যেমন প্রার্থীর অনৈতিক আচরণ, গণমাধ্যম দখল, প্রভাবশালী গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপ। অনেক দেশে সরকার বা ক্ষমতাসীন দল ’নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ’ করে ফলাফল আগেই নির্ধারণ করে রাখে। লেখক এটাকে বলেন “Electoral Authoritarianism”, যেখানে নির্বাচন হয়, কিন্তু তা বাস্তবে অবাধ নয়।

.

Norris তুলনামূলকভাবে অঞ্চলভিত্তিক বিশ্লেষণ করে ‍উদাহরণ দেন। সর্বোচ্চ সততা নির্বাচনের উদাহরণ হলো উত্তর ইউরোপ, কানাডা, নিউজিল্যান্ড। মধ্যম মানের নির্বাচনের উদাহরণ হলো লাতিন আমেরিকা, পূর্ব ইউরোপ আর সবচেয়ে দুর্বল মানের উদাহরণ হলো আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া (যেমন বাংলাদেশ, পাকিস্তান)। তিনি দেখান, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠানিক শক্তি যত বেশি, নির্বাচন তত সুষ্ঠু। পাশাপাশি, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নাগরিক অংশগ্রহণও গুরুত্বপূর্ণ।

.

ব্যর্থ নির্বাচনের ভয়াবহ প্রভাবও তুলে ধরা হয় এ বইয়ে। জনগণের আস্থার পতন, ভোটার উদাসীনতা ও রাজনৈতিক হতাশা, সহিংসতা ও দাঙ্গা, আন্তর্জাতিক বৈধতার সংকট থাকার উদাহরণ হিসেবে কেনিয়া, ও আফগানিস্তানের কথা বলেছেন যেখানে বিতর্কিত নির্বাচন পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক সংঘাতে।

.

এসব সমস্যার সমাধান বাতলাতে গিয়ে তিনি বলেছেন যে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত সংস্থা, ও খোলা ভোটগণনা, পর্যবেক্ষণ, ফলাফল প্রকাশ, ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক দায়িত্ববোধ, বহিরাগত পর্যবেক্ষক ও প্রতিবেদন, ইভিএম ও ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কথা বলেছেন। Norris সতর্ক করেছেন যে, প্রযুক্তি একা সমস্যা সমাধান করবে না, রাজনৈতিক সদিচ্ছাই আসল।

.

গণতন্ত্র টিকে থাকতে হলে নাগরিকদের নির্বাচনের প্রতি আস্থা থাকতে হবে। আস্থা পুনর্গঠন সম্ভব যদি আইন ও নীতিমালা নিরপেক্ষ হয়, নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী হয়, দলগুলো দায়িত্বশীল হয় ও জনগণ সক্রিয়ভাবে জবাবদিহিতা দাবি করে।

.

সবশেষে তিনি বলেছেন যে, “Elections can make or break democracy, their integrity decides the difference.” Pippa Norris নির্বাচনের ব্যর্থতা বোঝাতে একটি বৈজ্ঞানিক কাঠামো তৈরি করেছেন, যেখানে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে  ‘’নির্বাচন শুধু ভোটের দিন নয়, বরং সমগ্র প্রক্রিয়া। তাঁর উপসংহার হলো, গণতন্ত্র তখনই টেকে, যখন নির্বাচনের সততা রক্ষা করা যায়।

 

.

২।

Electoral System Design: The New International IDEA Handbook(2005) বইটিতে দেখানো হয়েছে কীভাবে ভোট-প্রকিয়ার নিয়ম নির্মাণ করা যায়, কীভাবে তা বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রেক্ষাপটে যুক্তিযুক্ত ও কার্যকর হয়। বইটি ২০০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলকে নিয়ে আলোচনা করেছে, বিভিন্ন নির্বাচন পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা বিশ্লেষণ করেছে, এবং যেসব বিষয় ডিজাইনারদের মাথায় রাখতে হবে সেসবকে “চেকলিস্ট” আকারে উপস্থাপন করেছে।

.

এ বইয়ে লেখকরা বলেন যে নির্বাচনি ব্যবস্থা নির্বাচন করে শুধু একাধিক আসন বরাদ্দের নিয়ম ঠিক করা হয় না,  বরং এটি একটি মূল রাজনৈতিক উপায়, যা দেশে রাজনৈতিক ভারসাম্য, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও ক্ষমতার বিন্যাসে গভীর প্রভাব ফেলে। অনেক সময় স্বল্পমেয়াদী রাজনৈতিক স্বার্থ ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামোকে অচেতনভাবে নির্ধারণ করে দেয়। নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন করলে অন্য সাংবিধানিক ও প্রতিষ্ঠানগত অংশগুলোর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টির কারণ হতে পারে। যেমন একটি পদ্ধতি ক্ষমতাসীন দলের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে, আবার অন্য একটি পদ্ধতি বিরোধীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরি করতে পারে। তাই এই সিদ্ধান্ত যতটা সম্ভব উদার, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক হওয়া জরুরি।

.

বইটিতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, ’নির্বাচন পদ্ধতি’ বলতে কি বোঝায়, অর্থাৎ, ভোট কীভাবে গণ্য হবে, কোন প্রক্রিয়ায় ভোট থেকে আসন নির্ধারণ হবে। এখানে বিভিন্ন পদ্ধতির মৌলিক শ্রেণি (যেমন, একমঞ্চ, বহু-মঞ্চ, মিশ্র পদ্ধতি ইত্যাদি) এবং তাদের গঠন সম্পর্কে একটি বেসিক ধারণা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভোটার ও প্রার্থী কিছু ক্ষেত্রে দলের অংশগ্রহণ সীমাবদ্ধতা, ভোটের একগুণতা, ভোট স্থানান্তর (transfer) পদ্ধতির নিয়ম ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হয়েছে।  তিনটি প্রধান ধারা রয়েছে। Majoritarian পদ্ধতিতে বিজয়ী সবকিছু পায় (যেমন যুক্তরাজ্য, বাংলাদেশে প্রচলিত FPTP)। Proportional Representation (PR) পদ্ধতিতে আসন আনুপাতিক হারে বণ্টন (যেমন নেদারল্যান্ডস)। ও Mixed Systems হলো দুই পদ্ধতির মিশ্র রূপ (যেমন জার্মানি)। ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বর্তমানে FPTP (First-Past-The-Post) ব্যবহৃত হয়, যেখানে একটি আসনে সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থী জিতে যায়। তবে এই পদ্ধতিতে ছোট দলগুলো অনেক সময় বাদ পড়ে যায়, এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোট না পেলেও কেউ জিতে যেতে পারে।

.

নির্বাচন পদ্ধতি ডিজাইনের জন্য কিছু  মানদণ্ড (criteria) বিবেচনা করা উচিত। যেমন প্রতিনিধিত্ব (representation), অন্তর্ভুক্তি (inclusion), কার্যকর সরকার (effective government), সরকারের জবাবদিহিতা (accountability), স্থিতিশীলতা (stability), প্রশাসনিক সক্ষমতা (administrability) ইত্যাদি। পারস্পরিক টানাপোড়েন (trade-offs) থাকবেই, যেমন অধিক প্রতিনিধিত্ব হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ কঠিন হতে পারে। ডিজাইনারদের উচিত এই মানদণ্ডগুলোর মধ্যে প্রাধান্য নির্ধারণ করে একটি নির্ভরযোগ্য ও প্রাসঙ্গিক electoral পদ্ধতি বেছে নেয়া।

.

এ বইয়ে আরও বলা হয়েছে, নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন বা সংস্কার কখনোই শুধু নির্বাচনী প্রযুক্তি‐পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকে না; এটি একটি রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। কে সিদ্ধান্ত নেবে (রাজনৈতিক দল, আইনপ্রণেতা, সভা, জনগণ)? কীভাবে জনমত গঠন হবে? সংলাপ, বিতর্ক ও অংশগ্রহণের কৌশল কী হবে? এটি শুধু নীতিগত বা তাত্ত্বিক আলোচনা নয়, বাস্তব রাজনীতিতে বিভিন্ন actor (পক্ষ) ও তাদের স্বার্থ, সংস্কৃতি, ক্ষমতা বিবেচনায় এনে পরিবর্তন প্রণালীর একটি প্রকল্প রূপে নেওয়া যায়।

.

নির্বাচন পদ্ধতির নকশায় শুধু প্রতিনিধি (representation) বিষয়টি নয়, প্রশাসনিক বাস্তবতা (administration) ও নির্বাহী সক্ষমতা (implementability) বিষয়েও নজর দেওয়া জরুরি। যেমন  ভোট গণনা পদ্ধতি, ভোট স্থানান্তর নিয়ম, ব্যালট কাগজ, প্রযুক্তি, ভোটার শিক্ষা, অধিকার সুরক্ষা ইত্যাদি। একটি নির্বাচনি পদ্ধতি যতই “উত্তম” হোক না কেন, যদি প্রশাসন দক্ষ না হয়, তাহলে সঠিক ফল পাওয়া কঠিন হবে।

.

নির্বাচন পদ্ধতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্ক অত্যন্ত গাঢ়। একটি পদ্ধতি দল গঠন, দলগুলোর প্রতিযোগিতা, দলীয় রূপান্তর ও ঐক্য/বিভাজন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। এখানে আলোচনা আছে যে কিছু পদ্ধতি পার্টি‐কেন্দ্রিক (list systems) হয়, অন্যেরা ব্যক্তি‐কেন্দ্রিক (candidate-based) হয়। বেশ কিছু পদ্ধতি পার্টি কাঠামোকে সক্রিয় করে, আবার কিছু পদ্ধতির ক্ষেত্রে পার্টি শিথিল বা ঝুঁকিপূর্ণ হয়।

.

সমাপনী অংশে বলা হয়েছে, নির্বাচন পদ্ধতিতে ’একটি সঠিক উত্তর’ নেই, বরং বিভিন্ন বিকল্প ও তাদের পৃথক প্রভাব আছে। ডিজাইনারদের উচিত প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক পরিবেশ ও পছন্দসই মূল্যবোধ (representation, stability, accountability) মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া। এখানে মূল প্রস্তাব হলো বিকল্পগুলি যাচাই করা, প্রবণতা ও উদাহরণ দেখা এবং প্রেক্ষাপট-অনুসারী নকশা গঠন করা।

.

সর্বশেষে, একটি ব্যবহারিক “চেকলিস্ট” দেওয়া হয়েছে, যাতে ডিজাইনাররা বিভিন্ন ধাপে নিজেদের সিদ্ধান্ত মূল্যায়ন করতে পারে। এই চেকলিস্টে রয়েছে ভোটের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ, মানদণ্ড নির্ধারণ, বিকল্প বিশ্লেষণ, অংশগ্রহণ ও আলোচনা প্রক্রিয়া, প্রশাসনিক সক্ষমতা পরীক্ষা, বাস্তবায়ন প্রস্তুতি, ফল মূল্যায়ন ইত্যাদি। এইভাবে পুরো বইটি একটি রূপরেখার মতো ফুটে ওঠে। এটি শুধু ভোটের নিয়মনীতির তাত্ত্বিক আলোচনায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং বাস্তব প্রয়োগ, রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও প্রশাসনিক বাস্তবতার মধ্য দিয়ে একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি দেয়।

 

 

 

৩।

The Global Spread of Electoral Democracy (2001) বইয়ে লরেন্স হোয়াইটহেড বিশ্লেষণ করেছেন কীভাবে গণতন্ত্র, বিশেষত নির্বাচননির্ভর গণতন্ত্র বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে, কিন্তু এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছড়াতে ছড়াতে কীভাবে এর অর্থ, কাঠামো ও প্রয়োগ বদলে গেছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “Democracy spreads, but what exactly is spreading?” অর্থাৎ, আমরা যখন বলি গণতন্ত্র ছড়াচ্ছে, আসলে কি পশ্চিমা মডেলের লিবারেল ডেমোক্রেসি ছড়াচ্ছে, নাকি কেবল নির্বাচনী প্রথার অনুকরণ ঘটছে? হোয়াইটহেড দেখান যে গণতন্ত্রের বিস্তার কোনো সরল ‘success story’ নয়; বরং এটি রাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক শক্তির জটিল পারস্পরিক ক্রিয়ার ফল। বইটি তিনটি প্রধান থিমকে কেন্দ্র করে গঠিত- গণতন্ত্রের উৎস ও সংক্রমণ তত্ত্ব, গ্লোবালাইজেশনের প্রভাব, গণতন্ত্রের অভিযোজন, অনুকরণ ও বিকৃতি।

.

প্রথমত লেখক দেখান, গণতন্ত্র ছড়ানোর ধারণা কোনো নতুন ঘটনা নয়। প্রাচীন গ্রিস থেকে শুরু করে আমেরিকান ও ফরাসি বিপ্লব পর্যন্ত প্রতিটি যুগেই “রাজনৈতিক সংক্রমণ” ঘটেছে। তিনি গণতন্ত্রের বিস্তার বোঝাতে তিনটি রূপক ব্যবহার করেন। Contagion (সংক্রমণ), এক দেশ থেকে অন্য দেশে গণতন্ত্র ছড়ায়, যেন ভাইরাসের মতো। Demonstration (প্রদর্শন), কোনো দেশে সফল গণতন্ত্র অন্য দেশকে অনুপ্রাণিত করে। Conditionality (শর্তযুক্ত রপ্তানি) , পশ্চিমা দেশ বা আন্তর্জাতিক সংস্থা শর্ত জুড়ে দেয় (যেমন aid-for-democracy)।

.

দ্বিতীয়ত, হোয়াইটহেড স্যামুয়েল হান্টিংটনের “Three Waves of Democratization” তত্ত্বকে সম্প্রসারিত করে দেখান যে, গণতন্ত্রের ঢেউ কখনও আসে, আবার ফেরতও যায়। তিনি বিশ্লেষণ করেন তিনটি উদাহরণ। ১৯শ শতকে ইউরোপে গণতন্ত্রের উত্থান; উপনিবেশোত্তর এশিয়া-আফ্রিকায় ২০শ শতকের মাঝামাঝি “নির্বাচনী অনুকরণ”; এবং ১৯৮৯ সালের পর “তৃতীয় ঢেউ”  লাতিন আমেরিকা, পূর্ব ইউরোপ ও আফ্রিকায় গণতন্ত্রের পুনরুত্থান। তিনি সতর্ক করেন যে এই ঢেউয়ের মধ্যেই “ফেনা” (foam) আছে, অর্থাৎ অনেক দেশ শুধু নামেমাত্র নির্বাচনী কাঠামো গ্রহণ করেছে, কিন্তু গণতান্ত্রিক চেতনা নয়।

.

তৃতীয়ত লেখক দেখান যে পশ্চিমা গণতন্ত্র, বিশেষত যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মডেল বিশ্বের নানা দেশে কপি হলেও তা একেবারে একইভাবে কাজ করে না। তিনি বলেন, পশ্চিমা গণতন্ত্রে যে সাংবিধানিক ঐতিহ্য, নাগরিক সংস্কৃতি ও প্রশাসনিক সক্ষমতা রয়েছে, তা “রপ্তানির অযোগ্য।” একটি মজার দৃষ্টান্ত তিনি দেন, ১৯৯০-এর দশকে অনেক লাতিন আমেরিকান দেশ মার্কিন প্রেসিডেন্টীয় মডেল নকল করলেও, সেই কাঠামো দুর্নীতি ও কর্তৃত্ববাদকে শক্তিশালী করেছে, গণতন্ত্র নয়।

.

চতুর্থত:  হোয়াইটহেড বলেন গণতন্ত্র এখন একটি বৈশ্বিক পণ্য, যা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, NGO ও দাতা সংস্থার মাধ্যমে “export commodity” হয়ে গেছে। তিনি সতর্ক করেন যে গণতন্ত্রের “বাজারীকরণ” (marketization) গণতন্ত্রকে ভিতর থেকে দুর্বল করতে পারে, কারণ এটি স্থানীয় প্রেক্ষাপট উপেক্ষা করে “one-size-fits-all” রেসিপি দেয়, এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণকে অর্থনৈতিক অনুপ্রেরণায় রূপ দেয়। একটি আকর্ষণীয় গল্প তিনি দেন আফ্রিকার একটি দেশের উদাহরণে সেখানে আন্তর্জাতিক সংস্থার অনুদানে নির্বাচন হলো, কিন্তু স্থানীয় জনগণ নির্বাচনের অর্থই বুঝল না; তাদের কাছে এটা ছিল “বড়লোকদের বিদেশি উৎসব।”

.

পঞ্চমত তিনি ব্যাখ্যা করেন কেন গণতন্ত্রের পথ আঞ্চলিকভাবে ভিন্ন। ইউরোপে গণতন্ত্র এসেছে ধীরে ধীরে Institutional Maturity-র মাধ্যমে, লাতিন আমেরিকায় এসেছে Populism ও সামরিক শাসনের টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে, এশিয়ায় এসেছে Hybrid Model হিসেবে, যেখানে গণতান্ত্রিক নির্বাচন আছে, কিন্তু শাসনব্যবস্থা প্রায়শই কর্তৃত্ববাদী (যেমন সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া)। হোয়াইটহেড বলেন, “গণতন্ত্র কোনো ready-made প্যাকেজ নয়; এটি সংস্কৃতি ও ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার ফল।”

.

ষষ্ঠত: এখানে তিনি জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, OAS (Organization of American States) প্রভৃতি সংস্থার ভূমিকা বিশ্লেষণ করেন। এই সংস্থাগুলো election monitoring, technical support ও democracy promotion-এর নামে প্রভাব বিস্তার করে। লেখক বলেন, “এই সাহায্য কখনও সহায়ক, কখনও হস্তক্ষেপমূলক।” তিনি ১৯৯৪ সালের হাইতি নির্বাচন পর্যবেক্ষণের গল্প বলেন, যেখানে আন্তর্জাতিক মিশন ভোটগ্রহণে সফল হলেও পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়। তার বিশ্লেষণ আন্তর্জাতিক সহায়তা গণতন্ত্রের বাইরের কাঠামো তৈরি করতে পারে, কিন্তু ভিতরের সংস্কৃতি তৈরি করতে পারে না।

.

সপ্তমত: তিনি দেখান “Electoral Democracy” অনেক সময় “Democratic Façade” বা মুখোশে পরিণত হয়। একটি রাষ্ট্র নিয়মিত নির্বাচন করে, কিন্তু বিরোধী দল, সংবাদমাধ্যম, নাগরিক স্বাধীনতা দমন করে, তবু বাইরে থেকে তা “ডেমোক্রেটিক” বলে মনে হয়। রাশিয়া, মিশর, ভেনিজুয়েলা প্রভৃতি দেশের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “Electoral procedures can survive even when democracy itself dies.” এটি হোয়াইটহেডের সবচেয়ে শক্তিশালী থিসিস গণতন্ত্রের বহিরাবরণ বাঁচলেও ভিতরের আত্মা হারিয়ে যেতে পারে।

.

শেষে তিনি ভবিষ্যৎ নিয়ে সতর্ক আশাবাদ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ২১শ শতকে প্রযুক্তি, তথ্যপ্রবাহ ও নাগরিক যোগাযোগ গণতন্ত্রের নতুন রূপ তৈরি করছে, যেমন অনলাইন অংশগ্রহণ, নাগরিক উদ্যোগ, সামাজিক আন্দোলন। তবে তিনি সতর্ক করেন যে ইন্টারনেট-ভিত্তিক জনমত যদি বিভ্রান্তিকর তথ্য বা “digital populism”-এ পরিণত হয়, তাহলে এটি গণতন্ত্রকে গভীরতর সংকটে ফেলবে। তিনি উপসংহারে লেখেন, “Democracy has gone global, but not universal.” অর্থাৎ, গণতন্ত্র বিশ্বব্যাপী ছড়ালেও, তা সর্বজনীনভাবে গৃহীত বা সমানভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। হোয়াইটহেডের দৃষ্টিতে, নির্বাচন গণতন্ত্রের দরজা খুলতে পারে, কিন্তু চেতনার চাবিটি আমাদের হাতেই থাকতে হবে।

 

৪।

Arend Lijphart-এর ক্লাসিক বই “Patterns of Democracy: Government Forms and Performance in Thirty-Six Countries” (1999, 2nd Edition 2012) আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর শাসনব্যবস্থার কাঠামো, ধরন, এবং পারফরম্যান্স বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রভাবশালী গবেষণাগুলোর একটি। এই বইয়ে তিনি মূলত দেখিয়েছেন—গণতন্ত্রের দুটি প্রধান ধারা বা মডেল বিদ্যমান: (১) Westminster বা Majoritarian মডেল, যেখানে ক্ষমতা একদল বা সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে, এবং (২) Consensus বা সমঝোতাভিত্তিক মডেল, যেখানে ক্ষমতা বিভিন্ন দল, গোষ্ঠী ও অঞ্চলের মধ্যে ভাগাভাগি করে পরিচালিত হয়। এই দুটি মডেল শুধু কাঠামোগত দিক থেকে নয়, পারফরম্যান্স ও স্থিতিশীলতার দিক থেকেও ভিন্ন ফলাফল সৃষ্টি করে। Lijphart ৩৬টি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, সাংবিধানিক কাঠামো ও পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন কোন মডেল কোন প্রেক্ষাপটে কতটা কার্যকর। তাঁর মূল বক্তব্য, “গণতন্ত্র কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন নয়; বরং এটি হচ্ছে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে সকল নাগরিকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার একটি কাঠামো।”

.

Lijphart বইয়ের শুরুতেই স্পষ্ট করেন যে গণতন্ত্রকে একক কোনো মডেলে সীমাবদ্ধ করা যায় না। Westminster মডেলের দশটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে, একদলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার, দ্বিদলীয় দলীয় কাঠামো, একক আইনসভা, সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটব্যবস্থা, কেন্দ্রীয় ক্ষমতার আধিপত্য। এই মডেলে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে দ্রুত সক্ষম হয় এবং নীতির ধারাবাহিকতা থাকে। কিন্তু এর সীমাবদ্ধতা হলো সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মতামত অনেক সময় উপেক্ষিত হয়। রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা এখানে “winner takes all” ধরনের হয়। উদাহরণ: যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড (১৯৯০-এর আগে)।Lijphart-এর ভাষায়, “Majoritarian democracy is government of the majority, not necessarily for all.

.

Consensus মডেলে সরকারের গঠন সাধারণত জোট বা সমঝোতার ভিত্তিতে হয়। এর বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো বহুদলীয় ব্যবস্থা, আনুপাতিক ভোটব্যবস্থা (PR), বিকেন্দ্রীভূত ক্ষমতা, দ্বিকক্ষীয় আইনসভা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও সাংবিধানিক কঠোরতা। এই মডেলে সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগে বটে, কিন্তু এটি সমাজের সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করে। উদাহরণ: সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস। Lijphart বলেন “Consensus democracy aims to share power, not to monopolize it.

Lijphart প্রথম যে বিশ্লেষণী কাঠামো তৈরি করেন সেটি হলো “executives-parties dimension।” এখানে তিনি ৫টি সূচকের ভিত্তিতে দেশগুলোকে বিশ্লেষণ করেন। সরকারের গঠন পদ্ধতি,দলীয় ব্যবস্থা, একদলীয় বা জোট সরকার, নির্বাচনী পদ্ধতি, স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা। এই বিশ্লেষণ দেখায়—Westminster মডেলে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ও একদলীয়, আর Consensus মডেলে ক্ষমতা ছড়িয়ে থাকে এবং বিভিন্ন গোষ্ঠী নীতিনির্ধারণে অংশ নেয়।

.

দ্বিতীয় কাঠামোটি হলো “federal-unitary dimension।” এখানে মূলত কেন্দ্র ও অঞ্চলভিত্তিক ক্ষমতা বণ্টন বিশ্লেষণ করা হয়। সূচকগুলো হলো  ফেডারেল বনাম ইউনিটারি কাঠামো, দ্বিকক্ষীয়তা, সাংবিধানিক কঠোরতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন। Consensus মডেল সাধারণত ফেডারেল কাঠামোর মাধ্যমে বিকেন্দ্রীকৃত ক্ষমতা পরিচালনা করে (যেমন জার্মানি)। Westminster মডেল ইউনিটারি কাঠামোর (যেমন যুক্তরাজ্য) ওপর নির্ভর করে।

.

Lijphart তাঁর গবেষণায় ৩৬টি গণতান্ত্রিক দেশের শাসনব্যবস্থা বিশ্লেষণ করেন। তিনি একটি ইনডেক্স স্কোর তৈরি করে দেশগুলোকে Westminster ও Consensus ধারা অনুযায়ী অবস্থান নির্ধারণ করেন। UK, নিউজিল্যান্ড, বার্বাডোস Westminster ধারা, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস—Consensus ধারা, অনেক দেশ মাঝামাঝি অবস্থানে। এই তুলনামূলক চিত্র পাঠককে বোঝায়—গণতন্ত্রের রূপ এক নয়, বরং বহুরূপী ও প্রেক্ষাপটনির্ভর।

.

Lijphart নির্বাচনী অংশগ্রহণ, সংখ্যালঘু অধিকার, সামাজিক আস্থা ও নাগরিক সন্তুষ্টির ভিত্তিতে গণতন্ত্রের গুণগত মান পরিমাপ করেছেন। ফলাফল স্পষ্ট Consensus মডেলে এই সূচকগুলো উচ্চতর। “Power-sharing democracies are not only more inclusive, they are also more legitimate.

.

একটি সাধারণ ধারণা হলো Westminster মডেল দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। কিন্তু Lijphart দেখিয়েছেন Consensus মডেলও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। বরং টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি নীতির কারণে Consensus মডেল অনেক সময় ভালো ফল দেয়। উদাহরণ: সুইডেন, নেদারল্যান্ডসের টেকসই অর্থনীতি।

.

Westminster মডেল নীতিগত কার্যকারিতা (efficiency) বাড়ায়, কিন্তু প্রতিনিধিত্ব সীমিত রাখে। Consensus মডেল বিপরীতে বেশি প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে কিন্তু কিছুটা ধীরগতি আনে। Lijphart-এর মতে, গণতান্ত্রিক বৈধতা ও আস্থার জন্য প্রতিনিধিত্বই মুখ্য। কার্যকারিতা প্রতিনিধিত্বকে প্রতিস্থাপন করতে পারে না।

.

বহুজাতিক, ভাষাগত বা ধর্মীয় বৈচিত্র্যপূর্ণ সমাজে Consensus মডেল অধিক কার্যকর। যেমন সুইজারল্যান্ড ও বেলজিয়ামে জাতিগত বিভাজন সত্ত্বেও শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্র টিকে আছে। অপরদিকে, এককেন্দ্রিক Westminster ধারা অনেক সময় সংঘাত বাড়ায়। উদাহরণ: শ্রীলঙ্কায় সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনের ফলে তামিল সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হয়।

.

 

Lijphart তাঁর বইয়ের শেষদিকে কিছু নীতিগত প্রস্তাব দেন। আনুপাতিক ভোটব্যবস্থা গ্রহণ, বহুদলীয় ও কোয়ালিশনভিত্তিক সরকার, বিচার বিভাগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা, সাংবিধানিক ভারসাম্য রক্ষা, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। তার মতে, কার্যকারিতার জন্য Westminster মডেলের কিছু উপাদান থাকতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার জন্য Consensus কাঠামোই বেশি উপযোগী।

Lijphart-এর এই বই আমাদের শেখায়—গণতন্ত্রের কোনো একক ছাঁচ নেই। বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সামাজিক বৈচিত্র্য ও ইতিহাস অনুযায়ী শাসনব্যবস্থা ভিন্ন হতে পারে। Westminster মডেল স্পষ্ট ও দ্রুত হলেও অন্তর্ভুক্তিমূলক নয়; Consensus মডেল ধীর হলেও অংশগ্রহণমূলক ও স্থিতিশীল। তিনি বলেন, “Majoritarian democracy may be simple, but consensus democracy is wiser.” সমাজ যত বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ, ক্ষমতা ভাগাভাগিভিত্তিক গণতন্ত্র ততই কার্যকর ও টেকসই। কারণ এতে শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়, সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠও রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে স্থান পায়। এভাবেই গড়ে ওঠে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র, যেখানে নাগরিকরা শুধু ভোটার নয় বরং শাসনপ্রক্রিয়ার অংশীদার।

 

Share Now
Author

Dr. Shafiqul Islam

(BBA, MBA, DU; Mphil, Japan; PhD, Australia) Deputy Secretary, Government of Bangladesh. Chief Executive Officer, Cumilla City Corporation, Local Government Division, Ministry of LGRD

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Rating*

error: Content is protected !!

My Shopping Cart