প্রবন্ধ: ‘গণঅভ্যূথান পরবর্তী তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশা ও বাস্তবতায় ফাড়াক কেমন?’ – সফিকুল ইসলাম
প্রতিটি গণ অভ্যূথানের পরপরই তরুণ প্রজন্ম ও ছাত্রজনতার আকাশ পরিমাণ প্রত্যাশা থাকে যা পূরণ না হওয়ায় তাদেরকে সর্বস্ব হারানোর মতোই হতাশায় নিমজ্জিত হতে হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে, আমরা যখন ৯০ দশকের শেষ দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তখনও ক্যাম্পাসে অনেক বড় ভাইদের সাথে সাক্ষাত হতো যারা ৯০ এর গণঅভ্যূথানে নেতৃত্ব দিয়েছিল বা সরাসরি জড়িত ছিল। তাঁদের কথাবার্তায় ত্যাজ ছিল, ৮৫-৯০ পর্যন্ত তাদের আন্দোলন ও কর্মকান্ড নিয়ে গল্প বলার সময় চোখ দিয়ে স্ফুলিঙ্গ বের হতো, এবং সফলতার আনন্দে তারা গর্ব অনুভব করতো। কিন্তু গল্প বলার শেষ দিকে বা আড্ডার শেষ দিকে কিছুটা ম্রীয়মান হয়ে হতাশ চোখে তাকিয়ে থাকতো আর বসে থাকতো। কারণ তারা তখনও কোনো পেশায় বা চাকুরিতে বা ব্যবসায় প্রবেশ করতে পারে নি। এবং সেই ভাইদের দেওয়া তথ্যমতে ৯০ এর গণঅভ্যূথানের আন্দোলন ও সমর্থনে লক্ষ লক্ষ ছাত্র দেশব্যাপী জড়িত ছিল। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ৯০ এর আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল, বা কর্মী ছিল বা সমর্থন দিয়েছিল, তারা সেশন জটের শিকার হয়েছিল কিংবা পড়াশোনার বয়স পেরিয়েছিল। এর মধ্যে হয়তো শতকরা ১ ভাগ রাজনৈতিক নেতা হয়ে পদ বাগিয়ে নিয়েছে, শতকরা ১ ভাগ কোনো না কোনো ব্যবসা বা ঠিকাদারীর পথ বেছে নিয়েছে, শতকরা ১ ভাগ বাপের টাকায় ব্যবসায় বা বিদেশে পাড়ি দিয়েছে, শতকরা এক ভাগ হয়তো বাউল বা আর্টিস্ট বা লেখক হয়েছে, শতকরা এক ভাগ হয়তো এক্টিভিস্ট বা বুদ্ধিজীবী হিসেবে থেকে গেছে, শতকরা ২০ ভাগ যারা পড়াশোনায় মনোযোগী ছিল নিজের চেষ্টায় চাকুরি জুটিয়ে নিয়েছে। অবশিষ্ট প্রায় ৭০ ভাগ কোনো চাকুরি বা পেশা বা কর্ম জোটাতে পারে নি। এই ৭০ ভাগ শিক্ষার্থীদের অনেকেই তখন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে থাকতো বা ঘুরতো, আর বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে বিষাদের জীবন পার করতো।
২০২৪ এর গণঅভ্যূথান অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদেরও এমন অবস্থার মুখোমুখী হতে হবে যদি না তারা সময়ানুগ সিদ্ধান্ত নেয় ও কর্মে প্রবেশের প্রচেষ্টা না করে। কারণ এমনিতেই তারা নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটাবিরোধী আন্দোলন, করোনা মহামারী ইত্যাদি কারণে পড়াশোনায় পিছিয়েছে। সবশেষ গণঅভ্যূথানে অংশ নিয়ে মিছিল, মিটিং, অ্যাক্টিভিটি করতে করতে পড়াশোনার টেবিলে বসার সময় পায় নি। ফলাফলও আশানূরূপ হয় নি। এটাতো বাস্তবতা যে দেশে বা বিদেশে যে কোনো প্রতিষ্ঠান কর্মী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে একাডেমিক রেজাল্ট দেখে, তারপর পরীক্ষা নিয়ে মেধা যাচাই করে। সেখানে নতুন প্রজন্ম তথা ছাত্র জনতা কতটা এ যুদ্ধে জয়ী হতে পারবে- এ নিয়ে ভাবা দরকার। বিশেষ করে ৯০ এর গণঅভ্যূথানের বড় ভাইদের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে এখনই পড়াশোনায় বা স্কিলে বা কর্মযজ্ঞে নেমে পড়া উচিত। সময় নষ্ট করার মতো সময় তরুণদের হাতে নেই। তাদেরকে এখনই ঠিক করতে হবে তারা কী হতে চায়। রাজনীতিক হতে চায়, নাকি রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মী হতে চায়, সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী হতে চায় নাকি চাকুরিজীবী, নাকি পেশাজীবি, ব্যবসায়ী হতে চায়। দেশ ও সমাজের ভবিষ্যতের পাশাপাশি নিজেদের ভবিষ্যতও ঠিক করে স্বপ্ন দেখে সেভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যূথানের মাধ্যমে ছাত্র জনতা অসাধ্যকে সাধন করেছে। তারা একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক সমাজ, গণতান্ত্রিক দেশ ও সংবিধান, অন্যায় ও অবিচারমুক্ত ন্যায়বিচারের বাংলাদেশ গড়ার ভিত দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। গণমানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে বা সংস্কারের পথপরিক্রমা এনে দিয়েছে। এজন্য জাতি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবেই। কিন্তু সেটাতো জাতীয় অর্জন বা সামষ্টিক এচিভম্যান্ট। প্রতিটি ছাত্র এখন বয়স বেড়ে বেড়ে তরুণ হবে, তখন তাদের জন্য কর্মসংস্থান জরুরি। কারণ তারা যদি কর্মবিমূখ হয়, যদি আয় না থাকে, তাহলে সে পরিবারের বোঝা হবে। পরিবারের বোঝা হলে সমাজের বোঝা হবে, সমাজের বোঝা হলে রাষ্ট্রেরও বোঝা হবে। সুতরাং এ আন্দোলনকারী ছাত্র জনতা তথা তরুণ প্রজন্মকে প্রতিটি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র কর্মের পথে এগিয়ে দিতে হবে। সবচাইতে বড় বিষয় হলো, তরুণ প্রজন্ম নিজেই নিজের কর্মপথ নির্ধারণ, পরিকল্পনা ও পরিশ্রম করে আদায় করে নিতে হবে। পেটে ভাত না থাকলে, কেবল কথা দিয়ে জীবন চলবে না। যে আন্দোলন করে তারা ইতিহাসের গর্বিত ইতিহাসের অংশ হয়েছে, সেরকম মনোযোগ, পরিশ্রম দিয়ে নিজ নিজ পেশা বা ব্যবসায় বা পড়াশোনায় তাদের উন্নতি লাভ করতে হবে। অন্যথায় একসময় তারা হতাশায় নিমজ্জিত হতে হবে।
.
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও বাস্তবতার মধ্যে বিরাট পার্থক্য থাকলে তা থেকে হতাশার জন্ম নিতে পারে এবং হতাশা থেকে ক্ষোভ ও বিদ্রোহের জন্ম হতে পারে। ইতিমধ্যে কিছু কিছু মহলে হতাশার সুর শোনা যাচ্ছে। এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের যারা ফেল করেছে তারাও আন্দোলন করে অটো গ্রেড চাচ্ছে। আন্দোলন করে অটো গ্রেড অটো চাকুরি হয়তো পাওয়া যাবে, কিন্তু পড়াশোনার ভিত্তি না থাকলে কর্মক্ষেত্রে ভালো করা যায় না। শ্রমজীবী কাজ হয়তো সম্ভব, কিন্তু মেধা ও দক্ষতা যেসব কাজে লাগে সেসব গুরুত্বপূর্ণ পদে তারা যেতে সক্ষম হবে না। এই জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাস্তব চরিত্র ও তৎপরবর্তী আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুধাবন করা অত্যন্ত জরুরি। জাতীয় পর্যায়ের সমস্যাগুলো সমাধানে ইতোমধ্যে সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, দুদক, প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও পুলিশ বিভাগের সংস্কারের পাশাপাশি আর্থিক খাত ও শিক্ষা সেক্টরকে পূনর্গঠনে কাজ শুরু হয়েছে। এসব সংস্কার কমিটি থেকে প্রাপ্ত সুপারিশের আলোকে বাস্তবায়িত হলে নিশ্চয়ই দেশে গণতন্ত্র যেমন বিরাজ করবে, তেমনি উন্নয়নের পথও সুসংহত হবে। সেটা হলে আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছাত্র-জনতা ও তরুণ প্রজন্ম গর্ব বোধ করবে। জাতীয় জীবনে ভূমিকা রাখতে পারা ও গণমানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারার অংশ হওয়ার মধ্যে আত্মসন্তুষ্টি আর কিছুই হতে পারে না। তবে এর সাথে সাথে নিজের ভাগ্যও একটু শান্তির ও স্বস্তির হওয়া জরুরি। জাতীয় পর্যায়ের এ পরিবর্তনগুলো হতে সময় লাগবে। ততদিনে ছাত্র ও তরুণ প্রজন্মের কর্ম শুরুর ও দক্ষতা অর্জনের সময় পেরিয়ে যাবে। তখন তারা পেশা, চাকুরি, ব্যবসা বা আয়ের পথ না পেয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হতে হবে। গণঅভ্যূত্থানের পরবর্তী সময়ে তরুণ প্রজন্ম রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং সামাজিক চাপের সম্মুখীন হতে পারে। মানসিক চাপ বা হতাশা তাদের ক্যারিয়ার বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ কারণে তাদের নিয়ে রাষ্ট্র যেমন চিন্তা করতে হবে, তেমনি তরুণদেরকেও এখনই সচেতন হয়ে ফোকাস করে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে এখনই ভাবতে হবে।
প্রথমত গণঅভ্যূত্থানের সময় এবং পরবর্তী পরিস্থিতিতে শিক্ষাব্যবস্থায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছিল তা থেকে বের হতে হবে। সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকার্যক্রম ফলপ্রসুভাবে তরান্বিত করে শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রশাসনের আন্তরিকতায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী করাতে হবে ও পাঠক্রম শেষ করতে হবে। সকল সেশন জট নিরসন করে পরীক্ষা সম্পন্ন করে ছাত্রদেরকে যথাসময়ে গ্রাজুয়েট করার কাজটি করতে হবে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরী শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতেও এ বিষয়ে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।
দ্বিতীয়ত সরকারের সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের সকল শূন্যপদে নিয়োগের কার্যক্রম শুরু করে তা দ্রুত নিয়োগের কাজ শেষ করতে হবে, যেন কিশোর-তরুণ শিক্ষার্থীরা সরকারি সেক্টরে নিজেদের নিয়োগের সুযোগ পায়।
তৃতীয়ত কর্পোরেট সেক্টরের সকল শিল্প কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সকল সেক্টরাল ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে কাজের পরিবেশ বিদ্যমান রাখা ও শূন্যপদে নিয়োগ সম্পন্ন করানো এবং নতুন নতুন সেক্টর সৃষ্টির মাধ্যমে কর্মসৃজনের পন্থা বের করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতার পাশাপাশি কর্পোরেট সেক্টরের সকল মালিক, উদ্যোক্তা ও নেতৃত্ত্বদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
চতুর্থ, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ছাড়াও যেসব কারিগরি ও বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির কাজ করে থাকে তারা তরুণ শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশকে স্কিল দেওয়া ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে জব মার্কেটের জন্য প্রস্তুত করতে পারে। বিশেষ করে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও যুব অধিদপ্তর এ বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
পঞ্চম, তরুণ শিক্ষার্থী যারা দেশের ক্রান্তিলগ্নে বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে জীবন বাজি রেখে ৭১ এর মতো ঝাঁপিয়ে পড়তে পেরেছে, তারা একটু মনোযোগী হলে ও দৃঢ়তার সাথে চেষ্টা করলে যে কোনো ব্যবসায়, পেশায় সফল হতে পারবে, বা মেধার প্রমান রেখে চাকুরিও যুগিয়ে নিতে পারবে। সরকার ও কর্পোরেট সেক্টরের পাশাপাশি তরুণ শিক্ষার্থীদেরকেও স্বপ্ন দেখতে হবে, একাগ্র হয়ে দৃঢ় মনোবল নিয়ে টানা পরিশ্রম করে যেতে হবে। তবেই তারা কর্মক্ষেত্রে গিয়ে নিজের জীবন সুন্দর রাখার পাশাপাশি দেশ গঠনেও ভূমিকা রাখতে পারবে।
ষষ্ঠ, দেশের অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা দূর করে ব্যাংক ও ব্যবসা বাণিজ্যকে শক্ত ভিতে দাঁড় করাতে হবে। চাকুরি ও বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি করে তরুণ ও নতুন উদ্যোক্তাদেরকে সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। তরুণদের উদ্ভাবন ও সৃজনশীল চিন্তার প্রতি উৎসাহিত করতে হবে। স্টার্টআপ বা উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া যেতে পারে যাতে তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে পারে।
সপ্তম, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিবর্তন ঘটছে বা ঘটবে।অনেক ক্ষেত্রে নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ ও চাহিদা তৈরি হতে পারে। তরুণদের উচিত সেই অনুযায়ী নতুন দক্ষতা অর্জন করা। টেকনোলজিক্যাল স্কিল যথা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ডেটা সায়েন্স, ডিজিটাল মার্কেটিং, ই-কমার্স ইত্যাদি দক্ষতা অর্জন করা; কৃষিভিত্তিক দক্ষতা যথা কৃষি বা গ্রামীণ অর্থনীতি মজবুত হবে এমন কৃষি প্রযুক্তি বা এগ্রিবিজনেস সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করা; ফ্রিল্যান্সিং যথা ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে কাজ করে আয়ের সুযোগের সম্ভাবনা বাড়ানো যায়।
অষ্টম, গণঅভ্যূথানের পর তরুণদের অনেকে সামান্য চাকুরি ব্যবসা না করে সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল হতে উৎসাহিত হতে পারে। তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী গড়ে তোলার জন্য বা সামাজিক কাজে যুক্ত হওয়ার জন্য সুযোগ করে দিতে হবে যাতে তারা সমাজে সামগ্রিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। গণঅভ্যূথান যেসব সমস্যা সমাধানের জন্য অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেসব সমস্যা সমাধানেও নতুন প্রজন্ম ভূমিকা রাখতে পারে। গণঅভ্যূথানের মাধ্যমে সমাজে ন্যায়, নৈতিকতা এবং মানবাধিকারকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টায় তারা অংশ নিতে পারে। তরুণদের মধ্যে এই মূল্যবোধগুলি স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা যায় সে বিষয়ে সরকার ও সমাজকে দায়িত্ব নিতে হবে। যাতে সমাজে ইতিবাচক সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনে জড়িত হয়ে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে।
নবম, তরুণ শিক্ষার্থীদের যারা রাজনীতিক হতে আগ্রহী তারা রাজনৈতিক সংগঠনে যুক্ত হতে পারে। গণঅভ্যূথানের ফলাফল যেন তরুণদের রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত করে সেরকম পথ বের করতে হবে। তরুণরা রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করলে ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো মজবুত হবে এবং জনগণের চাহিদা পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। বৈশ্বিক চিন্তা ও সহযোগিতার মাধ্যমে তরুণদের বিকাশকে ত্বরান্বিত করা যায়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কর্মসূচি, প্রশিক্ষণ এবং সহযোগিতার সুযোগের মাধ্যমে তারা বিশ্বমানের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে।
মোট কথা, গণঅভ্যূথানে অংশগ্রহণকারী তরুণদেরকে এখনই সচেতন হয়ে তাদের ভবির্ষত কর্মপন্থা নির্ধারণ করে, দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দক্ষতা রপ্ত করতে হবে। যাতে করে তাদের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের পেশা বা কর্মে বা জীবনযাত্রায় পৌঁছাতে পারে। মানুষের আশাবাদী হওয়াই পরম লক্ষ্য৷ আশাবাদী না হলে মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না, টিকে থাকতে পারে না৷ আমরা আশা করে আছি নতুন সরকার সব পরিস্থিতি সামলে নিয়ে একটা নতুন নির্দেশনা জাতির সামনে শিগগিরই তুলে ধরতে সক্ষম হবে৷ আর প্রতিটি পরিবার ও সমাজের সকল অনুষঙ্গও নতুন প্রজন্মকে তথা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত গড়তে সহযোগিতার সকল পথ সুগম করে দিবে।
(দৈনিক ডেইলি স্টার বাংলায় ২৯ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত)
