প্রবন্ধ: ‘পরিচ্ছন্ন নগরী তৈরি কার দায়? সরকার না নাগরিক’ – সফিকুল ইসলাম
নগরকে পরিচ্ছন্ন রাখা সরকারের দায়িত্ব। হোক তা কেন্দ্রীয় সরকার বা স্থানীয় সরকার। নগরীর সকল উন্নয়ন করা এবং সবকিছু পরিচ্ছন্ন রাখা সরকারের দায়িত্ব- এটা প্রায় সব নাগরিক মনে করে। তা করুক। সরকারই করবে। কিন্তু কেবল কি সরকারেরই দায়? নাগরিকদের দায় নেই? বিশেষ করে যেসব দেশের নাগরিকরা সুশিক্ষিত ও সচেতন কম, সেসব দেশে নাগরিকদেও মধ্যে এ ধারণাটা বদ্ধমূল যে ‘‘কেবল সরকার কাজ করবে‘‘। তাই নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে নাগরিকরা কোনো ভূমিকা রাখতে অনীহা প্রকাশ করে। আমরা যখন বলি সিটি, তখন ‘সিটিজেন‘ শব্দটিও মাথায় রাখতে হবে। আমরা যখন বলি নগর, তখন ‘নাগরিক‘ শব্দটিও মনে রাখতে হবে। তথা যে মানের সিটিজেন বা নাগরিক একটি নগরীতে বাস করে সে মানের পরিচ্ছন্নতা আমরা দেখতে পাবো একটি নগরীতে। এ সেক্টরের রাজনৈতিক অর্থনীতি বিশ্লেষণ করা জরুরি।
বিশ্বের সবচাইতে দূষিত বা অপরিচ্ছন্ন নগরীর তালিকার দিকে তাকালে আমরা দেখবো যে বাংলাদেশের কয়েকটি নগরী তাতে অনায়াসে জায়গা নিয়েছে। এখন এ জন্য দায়ী করবো কাকে? নিশ্চয়ই সরকারকে। এখন কে এই সরকার? কারা এই সরকার বানায়? বিশেষ করে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিগণতো এ নগরী থেকেই আসে। সরকারকে যদি সব দায় দিইও, সরকার যদি সব কাজ করেও তবু কি পরিচ্ছন্ন নগরী হবে? আমার মনে হয় হবে না। কয়েকটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিস্কার হবে। একটি নগরীতে যদি ১০ লক্ষ লোক বাস করে এবং সবাই যদি যত্র তত্র ময়লা ফেলে, নগরীর কোনো রূলস না মানে, তবে নগরীর হাজারখানেক কর্মচারির পক্ষে নগরী পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব নয়। এমন অনেক উদাহরণ আছে যে, ড্রেন পরিস্কারের দুদিনের মধ্যে আবার পলিথিন ভর্তি ময়লা দিয়ে ড্রেন ভরে ফেলা। দশবিশ তলা ভবনের চারপাশের উপর থেকে খুচরা ময়লা ফেলে এমন করে রাখে যে তাকানোর উপায় নেই। সামনের দিকে না ফেললেও বাকি তিনপাশে ময়লার খেলা। নিজেদেও বেলকনি দিয়ে নিচে তাকালে নিজেরাই লজ্জা পাবে। আরও অভাবনীয় বিষয় হলো, বেশিরভাগ বাড়ির বাথরুমের সুয়ারেজ লাইন ড্রেনের সাথে সংযোগ দেওয়া। সেরকমভাবে দোকানদাররা দোকান ঝাড়– দিয়ে রাস্তায় ময়লা ফেলে, গৃহিনী ময়লা ডাস্টবিনে না ফেলে ড্রেনে ফেলে, শিশুরা চিপস চকলেট খেয়ে রাস্তায় বা খালে ফেলে। সুতরাং সকল র্বজ্য যত্রতত্র ছড়িয়ে পড়ে। আর যারা ক্ষমতাধর নাগরিক তারা খাল দখল করে, পুকুর দখল করে, রাস্তার ট্রাফিক অমান্য করে, খাস রাস্তা বা জমিতে অবৈধ দোকান বা মার্কেট বসায়। সব মিলিয়ে নাগরিকদের অসহযোগিতা যেমন দৃশ্যমান তেমনি নাগরিকরা দায়িত্ব পালন করতে পুরোপুরি অনীহা প্রকাশ করে। সবাই সুন্দর নগরী চায়, কিন্তু কেউই সুন্দর আচরণ বা ম্যানার বজায় রাখে না। হ্যাঁ সরকার দায়িত্ব পালন করবে, নাগরিককেও দায়িত্ব পালন করতে হবে, সচেতন হতে হবে। অন্যথায় সরকার শতভাগ দায়িত্ব পালন করলেও তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
একটি ঘরে ১০ জন সদস্য থাকে আর এক জন কাজের লোক থাকে। সেখানে যদি ১০ জন ঘরের যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে, সবকিছু বিশৃংখল করে রাখে এ আশায় যে কাজের লোক সব গুছাবে। তবে কাজের লোক যখন পরিস্কার করবে বা গুছাবে তখনই সেটা পরিস্কার বা গুছানো থাকবে। বাকি ২৩ ঘন্টা পুরো ঘর অপরিচ্ছন্ন ও অগুছানো থাকবে। পরিকল্পনা করে সাজানো, গুছিয়ে দেওয়া, এবং নির্দিষ্ট স্থান থেকে নির্দিষ্ট ময়লা নেওয়ার ব্যবস্থা করা সরকারের কাজ। কিন্তু সেটাকে সার্বক্ষণিক সেভাবে রাখা ও সংরক্ষন করাতে নাগরিকদেও ভূমিকা বেশি।
নাগরিকদের মধ্যে আবার দুই ধরণের আছে। একদল সাধারণ, আরেকদল পাওয়ারফুল। পাওয়ারফুল নাগরিকগণ যদি সুনাগরিকের আচরণ না করে, তবে পরিচ্ছন্ন নগরীর স্বপ্ন ধুলিস্যাত হয়ে যায়। কারণ পাওয়ারফুল নাগরিকরাতো ছোটখাটো নিয়মকানুন মানেই না, বরং বড় বড় অন্যায়ে যুক্ত হয়ে যায়। যেমন সকল খাল, নদী, ও পুকুর দখল করা, রাস্তা-ফুটপাত-পার্ক-খাসজায়গা দখল করা, ট্রাফিক আইন না মানা, যত্রতত্র মার্কেট বসানো, সবকিছুতে চাঁদাবাজির আওতায় এনে বিশৃংখলা সৃষ্টি করা ইত্যাদি। সুতরাং পাওয়ারফুল নাগরিকরা যখন পরিচ্ছন্ন নগরী গঠনে সহযোগিতা না করে বরং অনিয়মের বাজার বসায় তখন সবকিছু গুবলেট হয়ে যায়। পাওয়ারফুল নাগরিকগণ নিজের স্বার্থে সবকিছু করে। এটাকে তাত্তি¡কভাবে বলে রাজনৈতিক অর্থনীতি। মানে পাওয়ারফুল নাগরিক নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে বৃহত্তর স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেয়।
পাওয়ারফুল নাগরিক বলতে রাজনীতিক, আমলা, মিডিয়া মালিক, আইনজীবি, শ্রমিক নেতা, এনজিও নেতা, সাংবাদিক নেতা, ধর্মীয় নেতা সকলকেই বোঝানো হয়। তারা যে কেবল জোরপূর্বক দখলদারি করে তা নয়, বরং ¯েøা মোশনে দেশের আইন, বিধি, পরিপত্র ও নীতিমালাতে ভূমিকা রাখে। নগরীর মাস্টার প্ল্যান পাস হবে কিনা, কোন দিকে রূট যাবে, কোনখানে শিল্পকারখানা হবে, কোন শিল্প কোন এলাকায় স্থানান্তর হবে, নগর পরিকল্পনার ইতিউতি কী হবে তা তারা ঠিক করেন। উন্নয়নের নামে নগরীর নানান দিক নানান সিদ্ধান্ত তাদের প্রভাবের পরিকল্পনা দ্বারা বাস্তবায়িত হয়। সেসব বাস্তবায়নে কখনো সরাসরি কখনো গোপনে এই পাওয়ারফুল স্টেকহোল্ডার তথা নাগরিকগণ ভূমিকা রাখে। প্রতি ক্ষেত্রেই তারা এমন সিদ্ধান্ত নেয় বা এমন নীতিমালা বা বিধিমালা বানায় যাতে নদী দূষণ ঠেকানো, শিল্পবর্জ্য শোধন কিংবা পরিকল্পিত নগরীর আকাঙিক্ষত সৌন্দর্যবর্ধন সুদূর পরাহত হয়। বিচার মানি তালগাছ আমার এর মতোই সুন্দর নগরী চাই তবে এদিকটাতে এরকম হলে আমার ক্ষতি হবে তাই তা করা যাবে না –টাইপ সিদ্ধান্ত তারা চাপিয়ে দেন। ডাস্টবিন লাগবে তবে আমার বাড়ির সামনে না, দখলকৃত খাল উদ্ধার করতে হবে তবে আমার দখল করা জায়গাটুকু না, দুষিত কালো পানি বন্ধ করতে হবে, তবে আমার কারখানাটিকে বাদ দিয়ে। তথা পাওয়ারফুল স্টেকহোল্ডারগণ নাগরিক হলেও সুনাগিরকের কর্তব্য পালনে পুরোপুরি অনীহা প্রকাশ করে। রাজনৈতিক অর্থনীতি তথা ডমিনেটিং স্টেকহোল্ডারদের দৌড়াত্ম্য ও স্বার্থের খেলায় ক্লিন সিটি বা স্মার্ট সিটি বিনির্মান কঠিন হয়ে পড়ে।
এখন পরিচ্ছন্ন নগরী করতে করণীয় কী কী বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হবে যে কেন্দ্রীয় সরকার ও স্থানীয় সরকার মিলে মাস্টার প্ল্যান করে নগরী সাজাতে হবে, পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী ও স্বল্পমেয়াদী নানান পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারকে সুশিক্ষা প্রদান ও জনসচেতনতা তৈরির মাধ্যমে নাগরিকদেরকে অংশীজন করতে হবে প্রতিটি কাজে। তারপর শুরু হবে নাগরিকদের কাজ। নাগরিকগণ তাদের ময়লা আবর্জনা ছোট কন্টেইনার বিন এ জমাবে, এবং নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবে। আর সিটি কর্পোরেশন তাদের নিজস্ব পদ্ধতির মাধ্যমে নিয়মিত ডাস্টবিন থেকে ময়লা সংগ্রহ করে ল্যান্ডফিলে ফেলবে, এবং পরবর্তীতে বর্জ্য থেকে বিদ্যুত কিংবা বর্জ্য থেকে গ্যাস উতপাদন কওে বর্জ্যকে জিরোতে রূপান্তর করতে হবে। নাগরিকের ঘর বা প্রতিষ্ঠান বা শিল্পকারখানা থেকে সংগৃহীত বর্জ্য জিরোতে রূপান্তর হওয়া পর্যন্ত পুরো চেইনটাকে দাঁড় করানো সিটি কর্পোরেশনের বড় দায়িত্ব। সেখানে নাগরিকরাও অংশীজন হয়ে সহযোগিতা করতে হবে, কর্তব্য পালন করতে হবে। এক হাতে যেমন তালি বাজে না, তেমনি কেবল নাগরিক কাজ করলে নগরী পরিচ্ছন্ন হবে না। কেবল সরকার কাজ করলেও নগরী পরিচ্ছন্ন হবে না। সরকার ও নাগরিক উভয়ে হাতে হাত রেখে পারস্পরিক আন্তরিকতা নিয়ে ভূমিকা রাখলে পরিচ্ছন্ন নগরী সময়ের ব্যাপার মাত্র। ইতোমধ্যে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন বেশ কিছু বিষয়ে সফলতার আলো দেখিয়েছে। অন্য সিটি কর্পোরেশনের নাগরিক ও স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিগণ সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদেও সমস্যা ও লজিস্টিকের সাথে ¯থানীয় অনুষঙ্গ বিবেচনা করে বাস্তবায়ন করলে প্রতিটি নগরীই সুন্দর হবে।
যখনই আমরা স্মার্ট সিটি বা ক্লিন সিটি বলবো তখনই আমাদেরকে স্মার্ট নাগরিকও তৈরি করতে হবে। এমনসব উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা নিতে হবে যেখানে নাগরিকরা অংশ নিবে, সুশাসনে এবং কর্মদ্ধতিতে। সচেতন, তথ্যানুসন্ধানী ও শিক্ষিত সুনারিক গভর্নেন্সের ধাপে ধাপে অংশ নিবে। প্রথমত: ভোটে অংশ নিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবে। সচেতনভাবে তথ্য সংগ্রহ করে যোগ্য প্রার্থীকে সততার সাথে নির্বাচিত করবে। এমন প্রার্থীকে নির্বাচন করবে-যার দ্বারা এলাকার উন্নয়ন টেকসই হবে। দ্বিতীয়ত, জনপ্রতিনিধিদের নগর পরিকল্পনার অনুষঙ্গগুলোতে নাগরিকগণ মতামত দিবে, সেবা প্রদানের ধাপ, সময় ও কস্ট কমানোর ক্ষেত্রে স্টেকহোল্ডার সভাগুলোতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিবে, বাজেট প্রক্রিয়াতে অংশ নিবে। আয় বাড়ানো ও ব্যয় সংকুচন ও অগ্রাধিকার খাতগুলোতে ব্যয়ের বিষয়ে নাগরিকগণ মতামত দিবে। তৃতীয়ত: সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে ফর্ম পূরণ, অনলাইনের ব্যবহার, ওয়েবসাইট ব্যবহার, অনলাইন পেমেন্ট ফিডব্যাক দেওয়া ইত্যাদিও মাধ্যমে সরাসরি অংশ নিবে।
পরিচ্ছন্ন নগরী গঠনের ক্ষেত্রেও এ তিনটি পর্যায়ে নাগরিকদের মনেপ্রাণে অংশ নিতে হবে। স্থানীয় সরকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হতে হবে শিক্ষিত নাগরিক সমাজের। পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা, আধুনিক ডাস্টবিন সরবরাহ প্রয়োজনীয় স্থানে নির্ধারণ করা, প্রতিটি নাগরিককে সচেতন করা, বাড়ি বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করা থেকে সংগ্রহ করা থেকে শুরু কওে ল্যান্ডফিলে বর্জ্যকে বিদ্যুত উতপাদান বা গ্যাস উতপাদনের মাধ্যমে জিরোতে রূপান্তর করার প্রক্রিয়াতে সহযোগী স্টেকহোল্ডার হিসেবে নাগরিকদেরকে অংশ নিতে হবে। সব কাজ সরকার করবে আর নাগরিক যত্র তত্র ময়লা ফেলবে- এ ধারণা থেকে বের হতে হবে। ড্রেন, খাল, ও নদীকে দখলমুক্ত রাখতে হবে আবার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
এখন মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন হলো যে নাগরিকদেও দায়িত্বেও কথা বারবার বলা হচ্ছে। সে নাগরিকদেরকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্বটি কার? সেটা নিশ্চয়ই সরকারের। সুতরাং সরকারকে সেরকম শিক্ষা ব্যবস্থা ও সামাজিক অবস্থা তৈরি করতে হবে যেখানে নৈতিকতার মানদন্ড, উচিত অনুচিতের ধারণা, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ নাগরিকরা শিশু বয়স থেকেই গ্রহণ করে। সেকারণে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও সহশিক্ষা কার্যক্রম গ্রহণে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। রাজনৈতিক স্বার্থেও উর্দ্ধে উঠতে হবে। পাশাপাশি পিতামাতা ও শিক্ষকের ভূমিকা নির্ধারণ এবং বাস্তবজীবনে এসবের অনুশীলন প্রক্রিয়া জোরদার করতে হবে। কারণ শিশু বাবা-মাকে দেখেই শেখে। বাবা-মা যেমন আচরণ করবেন, শিশুরা আগামীতে তেমন আচরণই করবেন। বাবা-মায়েরা যেন অনিয়ম ও অন্যায় করে পার না পান, সেরকম সুশাসন ও আইনের বাস্তবায়ন করে দেখানো সরকারের কাজ। দ্বিতীয়ত ভোটার বা নাগরিকগণ কাদের দেখে উতসাহিত হবে? নিশ্চয়ই জনপ্রতিনিধিদের দেখে। জনপ্রতিনিধিগণ যদি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন, গণমানুষের অধিকার ও ভোগান্তির প্রতি সহানুভূতিশীল হোন, তবে নাগরিকরাও সেটা অনুসরণ করবে। সুতরাং ভোটাধিকার, মানবাধিকার ও জনগণের মত প্রকাশ করার প্রয়োগের স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি গ্রহণ না করলে নাগরিকরা সঠিক লোককে নির্বাচিত করতে পারবে না। এগুলো করা সরকারের কাজ। সঠিক লোককে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচনের সুযোগ না দিলে অযোগ্য লোক নির্বাচিত হবে। যেখানে জনগণনও জনপ্রতিনিধিকে সম্মান করবে না। তাঁর কথা শুনবে না। সুতরাং ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে, নগরীতে নগরীতে আইনা মানার সংস্কৃতি গড়ে উঠবে। নগরীকে বসবাস উপযোগী করার ক্ষেত্রে কারও কোনো আন্তরিক ভূমিকা থাকবে না।
জাপানে পড়ার সময় এক প্রফেসরকে প্রশ্ন করেছিলাম যে, জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও সময় যুদ্ধবিধ্ব¯ত দেশ ছিল, অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়েছিলা। এরকম নাজুক অবস্থা থেকে মাত্র ২০-৩০ বছরে অর্থনীতির ভিত্তি শক্ত করতে পারার মূল কারণ কী ছিল? উত্তরে প্রফেসর বলেছিলেন যে, দুটো বিষয় ছিল। এক. তখনও জাপানের শতভাগ লোক শিক্ষিত ছিল। কেবল অক্ষরজ্ঞান নয়, সত্যিকার শিক্ষিত। দুই. জাপানের সকল লোক একই জাতিগোষ্ঠীর, শঙ্কর নয়। যে কারণে যে কোনো বিষয়কে তারা গ্রহণ করে একইভাবে। এটার প্রমান পেয়েছিলাম একটি আর্টিকেল পড়ে। যেখানে দেখানো হয়েছে কীভাবে জাপানিজ বাচ্চারা স্কুল টিফিন নেয় ও খায়, এবং এর সাথে রাষ্ট্রের আইন মানার কালচার তৈরি কীভাবে হচ্ছে। জাপানের সব বাচ্চারা একই নিয়মে স্কুলে টিফিন আনা-নেওয়া করে, একই নিয়মে খায়, একই সময়ে খায়, আবার একইভাবে টিফিনবক্স ধুয়ে বাসায় ফেরত নেয়। বাবা-মা ও শিক্ষকগণ এটা হুবহু বাস্তবায়ন করে আর বাচ্চারাও সেটাই একইরকম আচরণে মানে। কেউ নিয়মের কোনো অনুষঙ্গ মিস করে না। এবং সেকারণেই তারা বড় হয়ে রাষ্ট্রের কোনো আইন বিধি বা প্রথাকে অমান্য করে না। অথচ বাংলাদেশের স্কুলের দিকে তাকালে দেখবো যে, কেউ টিফিন আনে, কেউ আনে না। যারা আনে তারা কেউ খায় কেউ খায় না, একেকজন একেক সময় খায়, কেউ আবার অর্ধেক খায়, কেউ আবার দোকান থেকে কিনে হাবিজাবি খায়। কেউ টিফিন বক্স ধুয়ে রাখে , কেউ রাখে না। এরকম ভিন্ন আচরণকারী শিশুরা যখন বড় হয় তখন তারা আইন, বিধি, প্রথা না মানার সংস্কৃতিতে ধাতস্থ হয়ে যায়। এরকম নাগরিকদেরকে একরকম আচরণের মতো করে গড়ে তোলা কঠিন কাজ।
কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ, পাকলে করে ঠাসঠাস। সুতরাং শিশুবয়স থেকেই বাচ্চাদেরকে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। এবং এটা করতে হলে আমাদের বড়দেও চলাফেরার কালচার যেমন সত্য বলা ও সততার সহিত উপার্জন) তৈরি করতে হবে। আবার রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও সে ধরণের কালচার (যেমন সুশাসন ও ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ) বাস্তবায়ন করতে হবে। যাতে করে আজকের শিশুরা কালকের জন্য প্রস্তুত হতে পারে।
নাগরিক ও জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকার সকলে মিলেই নগরীকে পরিচ্ছন্ন করার কাজ করতে হবে। পরিবারের ক্ষুদ্র ইউনিট থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রের বৃহত্তর পর্যায়েও তা বাস্তবায়ন কওে কওে প্রদর্শন করতে হবে। যাতে কওে মানুষ গুড প্র্যাক্টিসের মাধ্যমে সকলে ভালো কাজে অনুপ্রাণিত হয় এবং আলোর দিকে ধাবিত হয়।
