Detail

Home - সমসাময়িক - পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কোটা এলিটদের দখলে

পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কোটা এলিটদের দখলে

পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কোটা এলিটদের দখলে

সংবিধানের ২৯ অনুসারে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা রাখাটা অবশ্যই মানতে হবে। সংস্কারের বিষয়ে নিম্নলিখিত ইস্যুগুলো বিবেচনায় নেওয়া জরুরি বলে আমি মনে করি।

এক. উপজাতি কোটা অবশ্যই দরকার। তবে কাদের জন্য? সবার জন্য? ২৯টি উপজাতির মধ্যে মাত্র তিনটি উপজাতি সব কোটা সুবিধা ভোগ করছে; অন্যরা অনেক পিছিয়ে।শুধু তিনটি উপজাতিই সিংহভাগ করবে? বাকিরা কেবল পিছিয়ে থাকবে? তাছাড়া উপজাতিদের মধ্যে জমিদার, শতশত পাহাড় আর বাগানের মালিক, বড় বড় নেতা, আমলা, ব্যবসায়ী, গবেষক, সাংবাদিক, শিক্ষক ও উকিল আছেন যারা সন্তানদেরকে কোটি টাকা ব্যয় করে বড় করেন, তাদেঁর সন্তানরাও কি উপজাতি কোটা পাবে? বাস্তবে এসব এলিটরাই সিংহভাগ কোটা সুবিধা ভোগ করছে যারা কোনভাবেই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নয়।

তাই কোটার নাম রাখা উচিত ‘উপজাতি কেবল যারা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া তাঁদের জন্য কোটা’। শুধু উপজাতি হলেই কোটা পাবেন না।সংবিধানের ২৯ ধারার মর্মার্থ ইহাই হওয়া উচিত।

দুই. নারী কোটা অবশ্যই দরকার। তবে কাদের জন্য? সব নারীর জন্য? নারীদের মধ্যে যারা ব্যবসায়ী, জমিদার, ঠিকাদার , বড় বড় নেতা, আমলা, গবেষক, সাংবাদিক, শিক্ষক ও উকিলসহ সমাজ ও রাষ্ট্রের এলিট রয়েছে যারা সন্তানদেরকে কোটি টাকা ব্যয় করে বড় করেন, তারাও কি নারী কোটা পাবে? বাস্তবে এসব এলিটরাই সিংহভাগ কোটা সুবিধা ভোগ করছে যারা কোনভাবেই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নয়।

তাই কোটার নাম রাখা উচিত ‘নারী কেবল যারা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া তাঁদের জন্য কোটা’। শুধু নারী হলেই কোটা পাবেননা।সংবিধানের ২৯ ধারার মর্মার্থ ইহাই হওয়াই উচিত।

তিন. মুক্তিযোদ্ধা কোটা অবশ্যই দরকার। মুক্তিযুদ্ধ না হলে বা মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন না করলে আজকে এ বাংলাদেশ আমরা পেতামনা। তবে মুক্তিযোদ্ধা নামের সবাই কি কোটা পাবেন? ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারাও? নাকি শুধু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা? তাছাড়া  মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, জমিদার, বড় বড় নেতা, আমলা, গবেষক, সাংবাদিক, শিক্ষক ও উকিলসহ সমাজ ও রাষ্ট্রের এলিট রয়েছে যারা সন্তানদেরকে কোটি টাকা ব্যয় করে বড় করেন, তারাও কি মুক্তিযোদ্ধা কোটা পাবে?বাস্তবে এসব এলিটরাই সিংহভাগ কোটা সুবিধা ভোগ করছে যারা কোনভাবেই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নয়।

তাই কোটার নাম রাখা উচিত ‘মুক্তিযোদ্ধা কেবল যারা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া তাঁদের জন্য কোটা’। শুধু মুক্তিযোদ্ধা হলেই কোটা পাবেন না।সংবিধানের ২৯ ধারার মর্মার্থ ইহাই হওয়াই উচিত।

চার. জেলা কোটা অবশ্যই দরকার।কারণ সকল জেলা সমান উন্নত নয়। তবে সংশ্লিষ্ট জেলার কারা পাবেন এ সুবিধা? সবাই? অনুন্নত জেলার নাগরিকদের মধ্যে ব্যবসায়ী, জমিদার, বড় বড় নেতা, আমলা, গবেষক, সাংবাদিক, শিক্ষক ও উকিলসহ সমাজ ও রাষ্ট্রের এলিট রয়েছে যারা সন্তানদেরকে কোটি টাকা ব্যয় করে বড় করেন, তারাও কি জেলা কোটা পাবে? বাস্তবে এসব এলিটরাই সিংহভাগ কোটা সুবিধা ভোগ করছে যারা কোনভাবেই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নয়।

তাই কোটার নাম রাখা উচিত ‘জেলা কেবল যারা জেলাতে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া তাঁদের জন্য কোটা’। শুধু পিছিয়ে পড়া জেলার নাগরিক হলেই কোটা পাবেননা।সংবিধানের ২৯ ধারার মর্মার্থ ইহাই হওয়াই উচিত।

সবশেষে বলবো, কোটা সংস্কারে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলে এবং এসব কোটার সুবিধা থেকে সংশ্লিষ্ট এলিটদেরকে বাদ দিয়ে দিলে কোটা নিয়ে যে রাজনৈতিক অর্থনীতি চলছে তা আর থাকবেনা। কোটার পরিমাণ কমিয়ে ১০-১৫% এ নিয়ে এলেও পিছিয়ে পড়ারাই এ সুবিধা পাবে।

-ড. সফিকুল ইসলাম।

(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )

Share Now
Author

Dr. Shafiqul Islam

(BBA, MBA, DU; Mphil, Japan; PhD, Australia) Deputy Secretary, Government of Bangladesh. Chief Executive Officer, Cumilla City Corporation, Local Government Division, Ministry of LGRD
error: Content is protected !!

My Shopping Cart