ধর চোর মনের ঘরে ফাঁদ পেতে
……………………………
আজ ইউনিভার্সিটি থেকে ফেরার পথে একটি বড় রাস্তা পার হবো। ট্রাফিক সিগনালে দাঁড়িয়ে। এমন সময় ঝমঝম করে বৃষ্টি নামলো। রাস্তাটা পার হলেই শেইড আছে যেখানে গেলে ভিজতামনা। কিন্তু সিগনালে যেহেতু লাল বাতি সেহেতু দাঁড়িয়ে ছিলাম। প্রায় দুমিনিটের সিগনাল, ভিজে আমি একাকার। যদিও রাস্তা মোটামোটি ফাঁকাই ছিল কিন্তু রাস্তা ক্রস করার কথা ভাবলামও না।
কেন? কারণ আমি জানি এবং বিশ্বাস করি এটা ভাঙলে আমি জরিমানার শিকার হতে পারি কিংবা দূর্ঘটনার ভয়ও আছে। কিংবা কেউ দেখলে বেআক্কেল বা আনসিভিলাইজড ভেবে হাসবে।

মনে মনে ভাবছিলাম, ঢাকায় হলে নিশ্চিত রাস্তা পার হয়ে যেতাম। নিয়ম ভাঙতাম।
কেন ভাঙতাম? কারণ জীবনের অনেক বছর পার করে, আশপাশ দেখে, মনে মনে প্রতীতি জন্মেছে যে ক্রস করলে কিছু হবেনা, গাড়ি থামাবে কিংবা জরিমানা হবেনা। কেউ দেখে হাসবেনা বা কিছুই হবেনা।

এই যে মনের ভেতর তৈরি হওয়া বিশ্বাস বা ধারণা বা মানসিক কাঠামো, বা মেন্টাল ফ্রেইম বা কল্পিত শৃংখলা সেটাই ইন্সটিটিউশন বা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান গড়তে অনেক সময় লাগে। ভাঙতে সময় লাগেনা। একবার ভাঙলে সহজে জোড়া লাগেনা।

যদি মানসিক ধারণা বা বিশ্বাস বা ট্রাডিশন বা অভ্যাস বা অভিজ্ঞতালব্ধ মনোভাব সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান শক্ত হয় তবে ৫০০০ লোকের একটি গ্রামের জন্য একজন গ্রাম পুলিশই যথেষ্ট। কারণ মানুষ জানবে যে, নিয়ম ভাঙলে বা অন্যায় করলে গ্রাম পুলিশ উপজেলায় জানাবে, পরে পাকড়াও হবেই, শাস্তি হবেই।
আর যদি মানসিক ধারণা বা বিশ্বাস বা অভিজ্ঞতালব্ধ মনোভাবের প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয় তবে ৫০০০ লোকের একটি গ্রামের জন্য গ্রাম পুলিশ কেন ৫০০ আর্মি দিলেও কাজ হবেনা। কারণ তারা জানবে যে নিয়ম ভাঙলে বা অন্যায় করলে পাকড়াও হবে না বা শাস্তি হবেনা।

এ কারণে সমাজের মধ্যে সামাজিক বিচারব্যবস্থা, ন্যায়-অন্যায়বোধ প্রতিষ্ঠা হলে সমাজের মানুষ এসব মেনে চলে। সোশ্যাল সিস্টেম বা রাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রণিধানযোগ্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করলে নাগরিকদের মানসিক ধারণা বা বিশ্বাস বা ট্রাডিশন, বা অভ্যাস বা ট্রেন্ড বা মনোভাবের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে, শক্ত হয়।

ট্রাফিক ক্রসিংএর সময় আরেকটি বিষয় কাজ করেছে যে এখানে ক্যামেরা সেট করা আছে। আমার মিথ্যা বলার কোন সুযোগ নেই। তাই প্রতিটি স্থানে বা সেবায় এরকম সার্ভিল্যান্স স্ট্রং করা জরুরি। যাতে করে মানুষ প্রতারণা করতে না পরে। প্রমান থাকে। ডিজিটাল সিস্টেম প্রতিষ্ঠানকে আরও সুসংহত করে। শুধু নীতিকথা দিয়ে আধুনিক মানুষ শুদ্ধ আচরণ করেনা। কিছু ভদ্রলোক করে, অনেক অনিয়ন্ত্রিত করেনা, তাঁদের ধরার জন্য একদিকে দরকার সুশাসন, অন্যদিকে দরকার তাঁদের ধরার ফাঁদ (যেমন ট্রাফিকের হিডেন ক্যামেরা)।

*করণীয়: সমাজের সচেতন শ্রেণী ও পদস্থ দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ক্ষুদ্র ও বড় পরিসরে এসব মানসিক প্রতিষ্ঠান গড়ার চেষ্টা করতে হবে, নগ্নভাবে বা দৃষ্টিকটুভাবে নিজে না ভাঙ্গি বা কাউকে ভাঙতে না দিই- সেটাও খেয়াল রাখতে হবে।

-ড. সফিকুল ইসলাম।

(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )

Share Now
error: Content is protected !!

My Shopping Cart