Detail

Home - সমসাময়িক - ভিআইপি সুবিধা থাকা উচিত?

ভিআইপি সুবিধা থাকা উচিত?

স্রোতের বিপরীতে গিয়ে কেউ লিখেনা বা বলেনা। আমি লিখছি। ভিআইপি সুবিধা থাকার দরকার আছে। এটা ছিল, আছে ও থাকবে। এবং থাকার দরকার আছে। সবদেশে আছে, সবখানে আছে।
.
আপনি যদি জুরিসপ্রুডেন্স(Jurisprudence), সুবিবেচনাবোধ(Conscience), স্থান-কাল-পাত্র (Time Place Manner), টেকসই সিদ্ধান্ত (Sustainability), ফলপ্রসূ ও কার্যকরী সিদ্ধান্ত (Effective decision), বাস্তবতার নিরীখে (Reality and practical situation) সিদ্ধান্ত নেন, তবে আমার সাথে একমত হবেন। আর হুজুগে হলে, স্রোতে ভাসলে, ভিন্ন ভাবনা মাথায় না আসলে, পরিপ্রেক্ষিত না বুঝলে, কান নিয়েছে চিলে বিশ্বাস করলে, বদমেজাজি হলে, আগ-পাছ-বাস্তবতা না ভেবে সিদ্ধান্ত নিলে আমার সাথে দ্বিমত করবেন।
ভিআইপি সুবিধা বহাল থাকা জরুরি। যা দরকার তা হলো ভিআইপি সুবিধার অপব্যবহার বন্ধ করা। হাতে ফোড়া হলে হাতটা কেটে ফেলে দেইনা, ফোড়াটা কাটি। চাকুরিজীবী অন্যায় করলে সেই পদটা এবলিশ করিনা, চাকুরিজীবী ব্যাক্তিটিকে সরাই, জেলে পাঠাই; পদটাকে না।
ব্যক্তি কখনো ভিআইপি হয়না, পদ ভিআইপি হয়। যখন পদের কাজে নিয়োজিত তখন ভিআইপি সুবিধা পাবেন। যখন পদের কাজে নিয়োজিতনা তখন ভিআইপি সুবিধা পাবেননা।
.
চলেন উদাহরণ দিই।
১। একজন মাননীয় বিচারপতি যখন বিচারকাজে আদালতে রওয়ানা দেন, তখন তার পৌঁছানো জরুরি। অন্যথায় হাজার হাজার বিচার প্রার্থী, উকিল, বিচারঅফিসার অপেক্ষায় থাকবে। পুনরায় আসতে হবে। রাস্তায় ঝামেলার কারণে তার কয়েকঘন্টা পরে পৌঁছানোটা বড় ক্ষতির হবে। তাই তাঁর গাড়িকে আগেই ছেড়ে দিতে হবে।
অন্যদিকে বিচারপতি আত্মীস্বজন নিয়ে প্রমোদ ভ্রমণে যাবেন সেজন্য তার ভিআইপি ট্রিটমেন্ট লাগবে; জনভোগান্তি হলেও। সেটা অপব্যবহার।
প্রথমটি ভিআইপি সুবিধা, আর দ্বিতীয়টি ভিআইপি সুবিধার অপব্যবহার।
২। একজন জেলা প্রশাসক, ইউএনওকে অনেক অফিস/প্রতিষ্ঠান ভিজিট করতে হয় আবার নিয়মিত অনেক সভা করতে হয়, সরকারের সব মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পত্রের জবাব দিতে হয়, আইনশৃংখলা দেখতে হয়, অনেক মানুষের সমস্যার প্রতিকার করতে হয়। যদি একটি বিষয় ইন্সপেকশন করতে গিয়ে আরেকটি মিটিং এ পৌঁছতে দেরি হয়, তবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রতিনিধি, নাগরিক, অফিসার ফিরে যাবেন। সেক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয় সময়ানুযীয় সম্পন্ন করতে যতটুকু ভিআইপি সুবিধা তাঁর দরকার ততটা তাঁকে দিতেই হবে।
জেলা প্রশাসক বা ইউএনও ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কাজে ঘুরতে যাবেন তখন ভিআইপি সুবিধা লাগবে। জনগণকে ভূগিয়ে বা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহার করে। সেটা অপব্যবহার।
প্রথমটি ভিআইপি সুবিধা, আর দ্বিতীয়টি ভিআইপি সুবিধার অপব্যবহার।
৩। একজন সম্মানীত মন্ত্রী/সচিবকে বিভিন্ন প্রোগ্রাম বা সভায় যেতে হয়, নিজ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সভায় উপস্থিত থাকতে হয়, সংসদে যেতে হয়, নাগরিকদের, বুদ্ধিজীবীদের, আন্দোলনকারীদের দাবিদাওয়া শুনতে হয়, সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করতে হয়। প্রতিটির সাথে লাখো মানুষের স্বার্থ জড়িত। এরকম জরুরি কাজে যখন তিনি যান তখন তাঁর জন্য ভিআইপি সুবিধা জরুরি। যাতে করে তিনি সব কাজ নির্বিঘ্নে করতে পারেন।
এর বাইরে যদি অন্যকারণে, নিজের ঘুরার সময়, ভ্রমণের সময়, আত্মীয়দের প্রমোদভ্রমণের সময় এসব ভিআইপি সুবিধা নেন তবে সেটা অপব্যবহার।
প্রথমটি ভিআইপি সুবিধা, আর দ্বিতীয়টি ভিআইপি সুবিধার অপব্যবহার।
৪। তেমনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা পুলিশ আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণে বা জান মাল রক্ষায়, সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারের জরুরি রোগীর চি কিতসায়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি স্থানীয় সম্প্রীতি ও সুরক্ষায় যখন কাজ করেন, শিক্ষক/অফিসার পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে রওয়ানা দেন, তখন হাজার হাজার মানুষের জীবন ও সম্পদের স্বার্থ জড়িত থাকে। যখন ওরকম জনস্বার্থে কাজ করেন, তখন তার জন্য ভিআইপি সুবিধা জরুরি।
অন্যদিকে অন্যকাজে নিজের স্বার্থে যদি ভিআইপি সুবিধা নেন তবে সেটা অপব্যবহার।
প্রথমটি ভিআইপি সুবিধা, আর দ্বিতীয়টি ভিআইপি সুবিধার অপব্যবহার।
…………
ভিআইপি সুবিধা সব দেশেই আছে। সবখানে আছে। না জেনে আজাইরা গফ কপচাবেননা। উন্নত ও সভ্যদেশে যেটা নাই বা খুব কম সেটা হচ্ছে ভিআইপি সুবিধার অপব্যবহার। ভিআইপি সুবিধা উন্নত দেশে আরও শক্তভাবে ও সুন্দরভাবে আছে।
তাই সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত ভিআইপি সুবিধা বহাল থাকবে প্রযোজ্য সকলক্ষেত্রে। তবে এর অপব্যবহার হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
ভিআইপি সুবিধার অপব্যবহার করার কারণে প্রতিটি সেক্টরের দুচারটা মালকে শাস্তি দিলেই বাকিসব সোজা হয়ে যাবে। কথায় কথায় ভিআইপিগিরি মারাবেনা।
এবং একই সাথে ভিআইপির নামে যেসব চামচা ভিআইপি সুবিধার নামে নিজের ধান্ধা করেন, তাঁদেরকে কঠোর হস্তে দমন করা।
ফায়ার সার্ভিস যদি আগুন নিভাতে রওয়ানা দেয়/এম্বুলেন্স যদি রোগী নিয়ে যায় তবে তারা সকল ভিআইপির আগে সুবিধা পাবেন।
*যারা বড় পদে আছেন তারা আমজনতার ফেসবুক পোস্টের মতো সিদ্ধান্ত না দেওয়াই ভালো। রয়ে সয়ে বোঝে শোনে সম্যক ধারণা নিয়ে বাস্তবতার নিরীখে সিদ্ধান্ত দিলে তা বাস্তবায়ন হবে, টেকসই হবে। অন্যথায় ফেসবুক শেয়ার আর সাময়িক বাহবা পাবেন, কাজের কাজ কিছু হবেনা।
*আশা করি যা বোঝাতে চেয়েছি তা বোঝাতে পেরেছি। না বুঝলে আবার পড়েন, তারপর কমেন্ট করেন।
Share Now
Author

Dr. Shafiqul Islam

(BBA, MBA, DU; Mphil, Japan; PhD, Australia) Deputy Secretary, Government of Bangladesh. Chief Executive Officer, Cumilla City Corporation, Local Government Division, Ministry of LGRD
error: Content is protected !!

My Shopping Cart