Detail

Home - সমসাময়িক - বেফাঁস কথায় হাসির রেশ।

বেফাঁস কথায় হাসির রেশ।

১। পাবলিক স্পিচ বা বক্তব্য প্রমিত, পরিমিত ও প্রাসঙ্গিক হওয়া বাঞ্চনীয়। অর্থাৎ  কোথায় কী বিষয়ে কী বলবেন তার সীমারেখা ও মাত্রাজ্ঞান জরুরি। সবকথা সব মুখে সবসময় সবখানে ভালো লাগেনা। অস্ট্রেলিয়াতে মেয়র, মন্ত্রী, এমপি, ইউনিভার্সিটির ভিসির বক্তব্য শুনেছি। টু দ্যা পয়েন্টে যে বিষয়ের অনুষ্ঠান সে বিষয়ে মূল কথাটা বলেছেন। বাড়তি দুএক কথা বললেও সেটা প্রাসঙ্গিক ও উইটে ভরা থাকে। একবার পরিবেশ মন্ত্রী ক্লাইমেট চেঞ্জ নিয়ে এক অনুষ্ঠানে দুঘন্টা বক্তব্য দিলেন পুরোটাই অর্থনীতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের মৌলিক বিষয়ে তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা। তথ্য উপাত্তসহ। জোর গলায় গলাবাজি করেননি। ব্রিসবেনের মেয়রের বক্তব্য শুনলাম স্টুডেন্টদের উদ্দেশ্যে, ছাত্ররা কী করা উচিত আর মেয়র ও সিটি অফিস ছাত্রদের জন্য কী করবে তার বাস্তব ও তথ্য নির্ভর কথা বললেন। কোন বাগাড়ন্বর নয়।

২। বাংলাদেশে হাজার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছি। শুনেছিও। যে কোন অনুষ্ঠানের মূল বিষয় বাদ দিয়ে শুধু কথা বেঁচে সবাই। হাজার কথার মালা গাঁথে চিৎকারে গলা শান দেয়। হালে হয়েছে নতুন ব্যারাম। সব বক্তা সবার নাম বলবে। উপস্থিত আছেন,  উপস্থিত আছেন………………….. আরো উপস্থিত আছেন……..। আরে ভাই উপস্থিত কারা আছেন সবাইতো দেখতেছেন। না হয় নতুন কেউ থাকলে প্রথম সূচনা বক্তব্যে কেউ একমিনিট পরিচিতি দিক। সবাইকে সবার নাম কেন বলতে হয়, তাই জানিনা। সময়ের অপচয় আর কান্ডজ্ঞান জিরো! দু:খজনক বিষয় হলো যে বিষয়ের আলোচনা সে বিষয়ে কারো কোন বক্তব্যই নেই! বক্তব্য সব অন্য বিষয়ে। কিছু একটা বলতে হবে বলে বলা আর নিজেকে জাহির করা।

৩। ক্ষমতা থাকলে আমি একটি আইন করতাম। যে কোন অনুষ্ঠানে যে বিষয়ে অনুষ্ঠান সে বিষয়ের আলোচনা হবে ৯৮% সময়। অবশিষ্ট সময় অন্যান্য ডেকোরাম ও সংযোগের জন্য। এবং কোন বক্তব্য পুনরাবৃত্তি চলবেনা। অবশ্য এ আইন যারা প্রণয়ন করবে বা বাস্তবায়নে যাদের দায়িত্ব থাকবে তারাই মঞ্চ পেলে ঝাড়া তিনঘন্টা অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য দিয়ে বসবে!

৪। জাপান এদিক থেকে এগিয়ে। কোন আইন ছাড়াই তারা সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সব সারে। স্বল্পতম সময়ে স্বল্পভাষী হয়ে প্রোগ্রাম শেষ করে। ১০০ ছাত্রের ডক্টরাল ডিগ্রি প্রদান অনুষ্ঠানে ভিসির বক্তব্য দু-তিন মিনিট। তারপরে সার্টিফিকেট দিতে যা সময় লাগে। অনুষ্ঠান শেষ। নির্ধারিত সময়ে শুরু ও শেষ। সময়ের সদ্যবহার।

৫।যাই হোক। কথা বাঙালির রোগ। কথায় শেষ করেছে সবারে। তাইতো সম্প্রতি সমুচার গিনেচ বুক নিয়ে ট্রল, অন্যসময় অন্যকারো কথার ট্রল। কারণ কি? কারণ যথা ব্যক্তি যথাস্থানে যথাবিষয়ে যথাযথ বক্তব্য রাখেননা। প্রসঙ্গের বাইরে যান এবং হাস্যবস্তুতে পরিণত হন। এবং এ হওয়া ইচ্ছাকৃত কিনা এ নিয়ে গবেষণা হতে পারে। কারণ বিনা বিনিয়োগে দেশব্যাপী পরিচিতির জন্য এর চাইতে মোক্ষম উপায় আর নেই। তবে এর দ্বারা বিদ্বগ্ধ ও ওজনদার ব্যাক্তিবর্গ নিজেদের হালকা করে ফেলেন। মাটিতে মিশিয়ে দেন। এক হিরো বগুড়াতে, লক্ষ আলম ঘরে ঘরে।

৬।  ইংরেজি ভাষায় একটি কথা আছে: ‘দ্য টাং ইজ এ ম্যানস বেস্ট ফ্রেন্ড, ইট ইজ অলসো হিজ ওয়ার্স্ট এনিমি।’ অর্থাৎ, জিহবা সবচাইতে ভালো বন্ধু আবার সবচাইতে খারাপ শত্রু।“ আমরা ভুলে যাই নীরবতা হিরণ্ময়। আমার বাবা এদিক থেকে সরস। সবসময় সবকিছুতেই তাঁর নীরবতা। সবসময়ই হিরণ্ময়। আরবীতেও একটা কথা আছে, মান সাকাতা সালিম। অর্থাৎ যে নীরব রইল, সে নিরাপদ থাকল।

আর শেখ সাদী বলেছিলেন যে ‘হয় মানুষের মতো হুঁশ করে কথা বলো, না হয় গবাদিপশুর মতো চুপ করে থাকো।’

এ নিয়ে একটি গল্প আছে। সার্কাসের এক গাধা মানুষের মতো কথা বলতে পারে, পত্রিকার পাতায় এই প্রতিবেদন পড়ে জনৈক রসিক ব্যক্তি মন্তব্য করেছিলেন, ‘মানুষ যদি গাধার মতো কথা বলতে পারে, তাহলে গাধা মানুষের মতো কথা বলতে পারবে না কেন?’

শেষ কথা।

নোট নেওয়ার বিষয় হলো যারা এরকম বক্তব্যকে ট্রল করছেন তারা নিজেরাও মঞ্চ ও মাইক পেলে এরকমই লাগামছাড়া অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য দেন অহরহ। আমাদের অনেকেই প্রহেলিকাময় আবছা জগতে বাস করে আর হাঁটু পানিতে ডুব দেয়।

-ড. সফিকুল ইসলাম।

(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )

Share Now
Author

Dr. Shafiqul Islam

(BBA, MBA, DU; Mphil, Japan; PhD, Australia) Deputy Secretary, Government of Bangladesh. Chief Executive Officer, Cumilla City Corporation, Local Government Division, Ministry of LGRD
error: Content is protected !!

My Shopping Cart