Detail

Home - ভ্রমণ কাহিনী - অস্ট্রেলিয়ায় ক্লাব কার্যক্রম

অস্ট্রেলিয়ায় ক্লাব কার্যক্রম

অস্ট্রেলিয়াতে বেশ কিছু ক্লাবে যাবার সুযোগ হয়েছে। নাইট ক্লাব নয়, সামাজিক ক্লাবে। যেমন স্পোর্টস ক্লাব, সাহিত্য ক্লাব, আর্ট ক্লাব, পিয়ানো ক্লাব, ফুটবল ক্লাব, ইয়োগা ক্লাব, প্রাত:ভ্রমন ক্লাব, সাইন্স ক্লাব। এরকম আরও কত কী!

প্রতিটি মহল্লাতেই এরকম ক্লাব আছে। কতগুলো বিষয় আমার চোখে পড়েছে। এসব ক্লাব যে বিষয়ে ফোকাস সে বিষয় নিয়েই থাকে। উদাহরণ হিসেবে ফুটবল ক্লাবের কথাই ধরি। উপশহরের একটি মহল্লার ক্লাবে গিয়েছিলাম।এ ক্লাবে এখন  ১০-১২ টি ফুটবল টিম আছে। প্রতিটি টিমে প্রায় ১৫ জন করে প্লেয়ার আছে। সবাই স্কুল পর্যায়ের। প্রতিটি টিমের জন্য  যারা কোচ বা ম্যানেজার তারা বিভিন্ন পর্যায়ে ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা আছে, আর আছে কিছু দক্ষতা বা নৈপূণ্য। বাচ্চারা সামান্য ফি দেয় ক্লাব পরিচালনার জন্য বা খরচ মেটানোর জন্য। এসব ক্লাব লাভজনক প্রতিষ্ঠান নয় মোটেই।

বেশকিছু প্রোগ্রামে গেলাম। প্রোগ্রাম মানে জাকজমক কোন প্রোগ্রাম নয়,  খেলার প্র্যাক্টিস বা ম্যাচ। ১২টি টিমের প্রায় ২০০ জন প্লেয়ার ও ২০০ অভিভাবক বা কোচ-ম্যানেজার মিলে ৫০০ লোকের জমায়েত হয়। প্রত্যেকে প্রত্যেকের জন্য নির্ধারিত সময়ে আসে। নির্ধারিত স্থানে প্র্যাকটিস বা ম্যাচ করে চলে যায়। শুরুর দিনে কোন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখিনি। দেখিনি নেতা বা আমলার কোন হামবড়া বক্তৃতা। ছিলনা মঞ্চ বা মাইক। অনেকদিন যাবার পরও জানিনা ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা কে, প্রেসিডেন্ট কে বা সেক্রেটারি কে। যদিও কমিটি একটি আছে সেটাও শুধু কাজ করার জন্য। নিজেকে প্রকাশের জন্য নয়। ‘তুই আমারে চিনস? আমি এ ক্লাবের প্রেসিডেন্ট‘ টাইপের ভাব দেখাবার কেউ নেই। ভিজিটিং কার্ড বা ফেসবুকে আমি অমুক ক্লাবের প্রেসিডেন্ট টাইপ কথা লিখেনা। এরা একেবারেই ভালোবেসে বা সামাজিক কাজ হিসেবেই করে।

ঠিক এরকমই চিত্র অন্যান্য সকল ক্লাবে। প্রত্যেকে প্রত্যেকের বিষয়ে ফোকাসড। যে যার মতো কাজ করছে। অনেক অভিভাবক স্বেচ্ছায়ও সময় দিচ্ছে, ভলান্টিয়ার হচ্ছে। যার যার ইন্টারেস্ট বা এক্সপারটাইজ অনুসারে।

এরা কেন এরকমভাবে ক্লাব-আচরণ করে? একটি হতে পারে যে, এরা তাঁদের বাবা-মা, পড়শী, সিনিয়র বা স্থানীয় কোন নেতাকে দেখেনি আজাইরা ভাব নেবার জন্য সময় কাটাতে, আজাইরা অনুষ্ঠান করে সময় বা অর্থ অপচয় করতে দেখেনি, বরং সবসময় দেখেছে সবাই প্রত্যেকের বিষয়ে ফোকাসড। দেখে দেখে শিখেছে বা তাদের মনোজগত গড়ে উঠেছে। অহেতুক কর্ম যেহেতু এখানে গুরুত্ব পায়না, সেহেতু কাজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। মানসিক প্রতিষ্ঠান বা মনোজগত তৈরি করা বড় কাজ।
আরেকটি বিষয় স্থানীয় সরকার নিজ আয়ে চলে প্রধানত। এবং মহল্লার নাগরিকদের পাবলিক ফেসিলিটি যেমন পার্ক, মাঠ, লাইব্রেরি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামগুলো করার ফেসিলিটি নিশ্চিত করে, বিনা পয়সায় বা নামমাত্র খরচে। ইনসটিটিউশনগুলো শক্ত। শুধু লেজুড়বৃত্তি তৈরি করে ভোট বা সামাজিক সমর্থন পাবেনা, কাজ করেই সমর্থন পেতে হবে, সেটাও হয়তো কাজ করে।

সুনাগরিক ও সুস্থ সমাজ গঠনে এসব সামাজিক ক্লাবের অনেক ভূমিকা আছে। সরকার সব কাজ করে দিতে পারেনা। সিটি করপোরেশন বা ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়ে শুধু মাঠ বা পার্ক করে দিতে পারে। এরপর এর রক্ষণাবেক্ষণ ও সঠিক ব্যবহার নাগরিকদেরই কাজ। প্রতিটি দেশের প্রতিটি গ্রাম ও শহরের, প্রতি পাড়ায়, প্রতি মহল্লায় এরকম সামাজিক ক্লাব বা শিক্ষামূলক বা বিনোদন ক্লাব থাকা উচিত। যেখানে ওই বিষয় ছাড়া আর কোন বিষয় প্রাধান্য পাবেনা। না রাজনীতি, না গোষ্ঠীতন্ত্র, না ব্যক্তির প্রাধান্য। শুধু যে বিষয়ের ক্লাব সে বিষয়ে আগ্রহী নাগরিকদের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করাই হবে মূল লক্ষ্য।

নি:স্বার্থ ও অলাভজনক এসব ক্লাবে সারা পৃথিবী ভরে যাক, সে প্রত্যাশায়।

-ড. সফিকুল ইসলাম।

(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )

Share Now
Author

Dr. Shafiqul Islam

(BBA, MBA, DU; Mphil, Japan; PhD, Australia) Deputy Secretary, Government of Bangladesh. Chief Executive Officer, Cumilla City Corporation, Local Government Division, Ministry of LGRD
error: Content is protected !!

My Shopping Cart