Detail

Home - সমসাময়িক - নকল প্রতিরোধ ও সমকালীন ঘটনা।

নকল প্রতিরোধ ও সমকালীন ঘটনা।

১।

২০০৬ সালের কথা। নবীন ম্যাজিস্ট্রেট। পরীক্ষার ডিউটিতে গেলে সিরিয়াসলি দায়িত্ব পালন করি। নকল সামনে পড়লে দুচারজন, দশ বারোজন, বহিস্কারের ব্যবস্থা নেই। তথা শিক্ষক বা কেন্দ্র দায়িত্বপ্রাপ্তকে অনুরোধ করি। নকলে সহযোগী  শিক্ষকও বহিস্কার করার আঞ্জাম করি। উম্মুক্ত পরীক্ষায় একবার এক কেন্দ্র থেকে ত্রিশ জন বহিস্কারের রেকর্ডও আছে। সবার কাছে বই পাওয়া গিয়েছিল। নকলরত অবস্থায়। বন্ধুদের অনেকে বলতো, এত কড় হসনে। আমি তো কড়া না। নরম মানুষ। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নকল বা অনিয়ম হবে, আর সেটা ব্যবস্থা হবেনা, সেটাতো হবার নয়। তাহলে প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে যাবে।

তেমনি একদিন জেলা প্রশাসকের কাছে খবর এলো, ডিগ্রী পরীক্ষার এক সেন্টারে এক কক্ষে সব নেতা। নকলের ছড়াছড়ি। স্যার আমাকে পাঠালেন। গিয়ে দেখি বই নকল ছাত্র আর শিক্ষক মিলে একাকার। আমার চোখের সামনে নকলরত অবস্থায় পড়েছে এমন ৯ জনের খাতা নিতে শিক্ষককে অনুরোধ করে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহোদয়কে বহিস্কারের ব্যবস্থা নিতে বললাম। বহিস্কার হয়েছে। ওরা বাইরে গিয়ে দল পাকাতে চেষ্টা করেছে। এসবে পাত্তা দিইনি। নিজ কৌশল ও সাহসে কাজ করেছি।

২।

উপজেলায় কাজ করার সময়ও নকল প্রতিরোধে পিইসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষায় কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। কোন শিক্ষক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোন ধরণের নাজেহালের বা হুমকির শিকার হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি। সাথে সাথে ধরে এনে শাস্তি নিশ্চিত করেছি। কেন্দ্রের পর কেন্দ্র সারাদিন দৌড়ায়ে দেখার চেষ্টা করেছি। দায়িত্বপ্রাপ্ত সকলকে পূর্ণ নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছি। কাজেও দেখিয়েছি।

আমাকে কাছ থেকে দেখেছেন এমন অনেকেই জানেন এসবের অনেক কিছু। চাকুরির শুরুতে শিখেছি Election, Examination and Enquiry এ তিন জিনিসে কোন ছাড় দেওয়া যাবেনা। শতভাগ ত্রুটিমুক্ত রাখতে চেষ্টা করতে হবে। বরাবরই চেষ্টা করেছি। সকল অনুষঙ্গের সহযোগিতা সবসময় না পেলেও নিজ চেষ্টার কোন কমতি ছিলনা।

৩।

মাসুদ সাহেব যা করেছেন -তাই সঠিক। তিনি স্রোতে গা ভাসাননি। তিনি তাঁর জায়গা থেকে চেষ্টা করেছেন। তাঁকে সম্মান জানাই। এ ঘটনা প্রমান করে যে ছাত্ররা নকল করে অভ্যস্ত। আর কেউ বাঁধা দেয়নি, দেয়না, দিতনা। তাই মাসুদ সাহেবের উপর ওদের এত রাগ।

মাসুদ সাহেব, আপনিই বাংলাদেশ। আপনিই মুক্তিযোদ্ধা, আপনি নৈতিক মনোবল নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। আপনার মতো যারা স্রোতের বিপরীতে দাঁড়াই, তারাই মানুষ। তারাই শিক্ষক। তারাই প্রকৃত দেশসেবক।

যারা আক্রমন করেছে তারা কারা? তাঁদের বাবা-মা কারা? তাঁদের পেছনে কারা? তাঁরা এ হিম্মত কীভাবে পায়? যারা শিক্ষককে মেরেছে তারা কি অন্য শিক্ষককে মারবেনা? তারা কি তাদের বাবা-মাকে একদিন মারবেনা? তারা কি সমাজের অন্য কাউকে মারবেনা? তারা কি কিল ঘুষি শুধু আজকেই দিয়েছে? আগে কখনো কাউকে দেয়নি? আর কখনো কাউকে দেবেনা? সুতরাং বাবা-মা, সমাজপতি, সকলের চিন্তার বিষয় হওয়া উচিত। কাদেরকে আমরা লালন করছি। যাদেরকে বেপরোয়া বানাচ্ছি তাদের হাতে মার খেতে হবে যারা বানাচ্ছি তাদের সকলের।

আমার অবাক লেগেছে। এত বড় ঘটনার পরে তাঁর সহকর্মী বা ইমিডিয়েট বসের কোন প্রতিক্রিয়া বা বক্তব্য চোখে পড়েনি। অন্তত পত্রিকায় আসেনি। এটাও সম্ভব? কর্তৃপক্ষ বা বস শেল্টার না দিলে কর্মকর্তা বা শিক্ষক কার ভরসায় কীসের ভিত্তিতে ডিউটি করবেন?

আমার ফেসবুক বন্ধুদের যারা নকল করেন, নকলে সহযোগিতা করেন, উদ্ধুদ্ধ করেন, নকল করে এমন বন্ধুদের সাফাই গান, তাঁরা চোখ বন্ধ করে একবার ভাবেন। আপনি ও আপনারা কীভাবে ছাত্রদেরকে তথা সমাজকে পঁচা নর্দমায় পরিণত করতে সহযোগিতা করছেন। আমাদের আশেপাশেই আছে এসব ভাই বোন-যারা এসব করে। পড়তে ভালো না লাগলে পড়বেননা। অন্য কাজ করেন, কাজ শিখেন, ব্যবসা করেন। জোর করে এমএ পাশ করতে হবে কেন ভাই?

হোয়াট গোজ এরাউন্ড কামস এরাউন্ড। যা আশেপাশে ঘটে, তা নিজ জীবনেও প্রভাব ফেলে। সুতরাং হাততালি দিবার কিছু নেই। নিশ্চিত থাকুন। যারা সমর্থন দিচ্ছেন তারা মার খাবেন মাসুদ সাহেবকে মারা ছাত্রদের হাতেই। যারা মাসুদ সাহেবকে মেরেছে তারা অন্য কাউকেও মারতে পারে। আর মাসুদ সাহেবকে মারা ছাত্ররা মার খাবে তাদের জুনিয়র কোন ছাত্রের হাতে, যখন তারা সিনিযর হবে।

-ড. সফিকুল ইসলাম।

(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )

Share Now
Author

Dr. Shafiqul Islam

(BBA, MBA, DU; Mphil, Japan; PhD, Australia) Deputy Secretary, Government of Bangladesh. Chief Executive Officer, Cumilla City Corporation, Local Government Division, Ministry of LGRD
error: Content is protected !!

My Shopping Cart