Detail

Home - সমসাময়িক - এমন যদি হতো, ধর্ষকদের কপালজুড়ে ধর্ষক লেখা থাকতো!

এমন যদি হতো, ধর্ষকদের কপালজুড়ে ধর্ষক লেখা থাকতো!

এমন যদি হতো, ধর্ষকদের কপালজুড়ে ধর্ষক লেখা থাকতো!
.
০২।
ষড়রিপু প্রতিটি মানুষের থাকে।
“ঘুমিয়ে আছে পোটেনশিয়াল ধর্ষক প্রায় সব পুরুষের অন্তরে।‘‘ পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা সম্পন্ন সকল মানুষের মনে ধর্ষকাম বিরাজ করে, ষড়ররিপু বেশি বেশি খেলা করে।
নিয়ন্ত্রণের উপায় কী?
১. ধর্ষককদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, যাতে আর কেউ সাহস না করে,
২. সহযোগীদের বা প্রশ্রয়দাতাদের শাস্তি;
৩. সুশিক্ষা সকল স্তরে বাস্তবায়ন। ঘরে বাইরে সমাজে দেশে। ;
৪. নৈতিক শিক্ষার প্রতিফলন বড়রা কাজে দেখাবে, নতুন প্রজন্ম দেখে শিখবে।
তথা ধর্ষক দমনের পাশাপাশি সব মানুষের ধর্ষকাম মানসিকতার দমনে সকল ব্যবস্থা নিতে হবে।
শর্টকাট রাস্তা নেই। অনেক factors/indicators রয়েছে। সবখানে কাজ করতে হবে। দীর্ঘপথে হাটতে হবে।
.
০৩।
স্রোতের বিপরীতে ভাবি:
পুরুষ হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা লাগার কিছু নেই। কারণ আমরা সুপুরুষ, কাপুরুষ না।
মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা লাগার কিছু নেই, কারণ আমরা মানবিক মানুষ, অমানুষ না।
বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা লাগার কিছু নেই, কারণ আমরা বাংলার দেশপ্রেমিক সুনাগরিক, অসভ্য কুনাগরিক না।
হ্যাঁ, যারা কাপুরুষ, অমানুষ, কুলাংগার, অসভ্য, কুনাগরিক কিংবা এদের মদদদাতা বা পরোক্ষভাবে প্রশ্রয়কারী, কিংবা নিরব সমর্থক, কিংবা দায়িত্বে অবহেলাকারী, তারা লজ্জা পাওয়া উচিত।
.
৪।
নোয়াখালীর ঘটনা বা সিলেটের এমসি কলেজে ধর্ষণের ঘটনা। এ বখাটেদের কঠোর বিচার দরকার। এরা একদিনে ধর্ষক হয়ে ওঠে নি।
সাথে এদের বিরুদ্ধে আগে যত নালিশ বা মামলা হয়েছে, থানায় কিংবা সমাজে সেগুলোর খবর নেওয়া দরকার। তখন কারা ওদের ছেড়ে দিয়েছে?, কারা এদের পক্ষে সুপারিশ করেছে?, কারা এদেরকে প্রশ্রয় দিয়েছে? তাঁদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনার লক্ষ্যে গ্রেফতার করা উচিত।
শুধু নোয়াখালী বা এমসি কলেজ না। প্রতিটি গ্রাম ও শহরে, উপজেলায় ও জেলায় এরকম বখাটেদের তালিকা করা উচিত। এদের বিরুদ্ধে মামলা হয়না কেন? হলে গ্রেফতার হয়না কেন? হলে সুপারিশ কারা করে? কারা প্রশ্রয় দেয়?- সকল মদদ দাতাদের গ্রেফতার করা দরকার।
প্রতি জেলায় ৫টা করে উদাহরণ তৈরি করলেই সকল মদদ দাতাদের বিষদাঁত ভেঙ্গে যাবে।
আছেন এমন কেউ? এটি করবেন?
নিশ্চয়ই আছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আছেন, আমার চেনা জগতে অনেক চৌকষ অফিসার আছেন, দেশপ্রেমিক নেতা আছেন, মেরুদন্ড ও ব্যক্তিত্বসহ মানুষ আছেন। সবে মিলে একটা বিহিত করা দরকার।
জীবনে কোনো বখাটের পক্ষে তদবির করবেন না সমাজে বা থানায় বা অফিসে। ভুলেও প্রশ্রয় দিবেন না।
.
০৫।
এক ধর্ষকের নাম হারুন। হারুন সায়মাদের বাড়ি যে ভবনে, সেটিরই আটতলার বাসিন্দা পারভেজের খালাতো ভাই। তাঁর বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। এক মাস ধরে হারুন আটতলার ওই ফ্ল্যাটেই ছিলেন।
হারুন পারভেজের রঙের দোকানে কাজ করতেন।
তার মানে হারুন হোমরা চোমরা কেউ না। সাধারণ গরীব বা নিম্নমধ্যবিত্ত ফ্যামিলির ছেলে। এ সমাজেরই।
তাকে তার পরিবার, স্কুল, সমাজ মানুষ করতে পারেনি। আচরণের সীমানা বোঝাতে পারেনি।
আমরা প্রতিটি কন্যা সন্তানের বাবা-মা আতঙ্কিত হচ্ছি, নিজের কন্যার ভবিষ্যত নিয়ে, হওয়াই স্বাভাবিক। আর ঘৃণা করছি সায়মার ধর্ষককে। করাই যৌক্তিক।
কিন্তু সাথে এ প্রশ্নও করি,
আমার ছেলে সন্তানটি ধর্ষক সায়েমের মতো নয়তো যে এরকম করবে? আমার ছেলে সন্তানটি নয়ন নয়তো যে কোপাবে?
আমার ছেলে সন্তানটি অমুক বখাটের মতো নয়তো যে কথায় কথায় অন্যের গায়ে হাত তুলবে? অন্যের অধিকার কেড়ে নিবে?
কারণ আমাদের সমাজে সায়মাদের আতঙ্কিত বাবা-মারা যেমন আছে। সমপরিমাণে হারুন/নয়ন/অমুক তমুকদের বাবা-মাও আমরাই।
নিজের ঘর, সন্তান আত্মীয় ও প্রতিবেশী সামলাই।
তবে দেশ ও সমাজ সুন্দর হবে।
.
০৬।
খবরের কাগজে ধর্ষণের খবর আসে। সাথে তাদের ছবিও থাকে। দেখতে মানুষ হলেও মানুষ নয়। কোনো প্রকার সম্পর্ক, প্রেম, বোঝাপড়া ছাড়া কারও উপর ঝাঁপিয়ে পড়া কেবল জন্তুর পক্ষেই সম্ভব। এরাও সেরকম জন্তুই ।
এরা ড্রেস পরা, চুল স্পাইক করা, কানে দুল পরা, বাহারি চলা শিখেছে, শিখেনি প্রকৃত আচরণ, মাত্রাজ্ঞান, নৈতিক শিক্ষা, ভদ্রতা কিছুই। পোষাক ও শিক্ষা কেনা যত সহজ, প্রকৃত শিক্ষা, মানুষত্ত্ববোধ, মূলবোধ অর্জন তত সহজ নয়। শিক্ষা ব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা, পরিবার ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা কেউ তাদেরকে কিছু শেখাতে পারেনি।
পরতে পরতে কতকিছু অর্জন বাকি আমাদের।
অনেকেই হয়তো আমার মতোই শেয়ার দিয়েই ক্ষান্ত হবেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে আমরা যারা আমাদের পরিচিত লাগামহীনদের প্রশ্রয় দিই, কেয়ার করি, আমরাও আসলে তাদেরকে উস্কে দিচ্ছি।
আমাদের ঘরে, সমাজে, আত্মীয়দের মধ্যে যখন কোনো ছেলে এরকম ইভটিজিং করে, সীমা অতিক্রান্ত করে, বেফাঁস মন্তব্য করে তখন আমরা যারা শাসন করিনা, তারাও এসব ধর্ষণের ঘটনার জন্য দায়ী।
একটু খেয়াল করলেই আশেপাশে গ্রামে শহরে নিজেদের কাউকে হয়তো দেখতে পাবো। সবাই নিজের এখতিয়ারের মধ্যে যারা আছে তাদের থামাই। ঘরে ও রাষ্ট্রে সবখানে সঠিক বিচার জরুরি। যাতে আর কেউ এরকম না করে।
ঘৃণা ধর্ষকদের প্রতি, আর নিন্দা আমাদের প্রতি যারা নতুন প্রজন্মকে সঠিক আদর্শ দিতে ব্যর্থ হচ্ছি।
.
০৭।
সমাজে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা ধর্ষণ ইস্যুতে সোচ্চার, তাদের মধ্যেও কিন্তু ধর্ষক আছেন;
ঘাপটি-মারাদের থেকে সাবধান!
খুব খেয়াল!
.
০৮।
‘ধর্ষিত‘ কোন বিশেষণ নয়। এটা কোন ব্যক্তিকে বর্ণনা করেনা। এটা একটা ক্রিয়া মাত্র। এটা ঘটেছে মাত্র। ধর্ষিত হওয়া কোন ব্যক্তিকে পরিচিত করেনা।
আমি একবার অস্ত্রের মুখে ডাকাতির শিকার হয়েছিলাম, কিংবা ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছিলাম। তখন আমার নামের পাশে বলা হয়না ডাকাতিত বা ছিন্তায়িত বা অনুরূপ কিছু।
তখনো আমি একটি একটি মেয়ে। কোন বিদেশী বা ভিন্ন কেউ নয়। কোন অপরিচিত কেউ নয়। একটি স্বাভাবিক মেয়ে।
.
০৯।
সবে অন্যের বিচার চাউক ও করুক।
আমি নিজের বিচার চাই, ও করি।
– এ হোক প্রত্যেকের অঙ্গীকার।
নিজের ঘর ও সন্তানকে ঠিক করি। সমাজ ও দেশও ঠিক হয়ে যাবে।

.

১০।

ধর্ষণের প্রতিবাদে যারা লিখছেন

ফেসবুক ভরি,

তাদের মাঝেও ধর্ষক আছেন

ভেবে কহেন কবি।

মুখে হাগে মুখে খায় বাদুড় নয়,

সে যে মানবজাতি।

.

(বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণের ঘটনার প্রেক্ষিতে লেখা হয়েছিল। )

Share Now
Author

Dr. Shafiqul Islam

(BBA, MBA, DU; Mphil, Japan; PhD, Australia) Deputy Secretary, Government of Bangladesh. Chief Executive Officer, Cumilla City Corporation, Local Government Division, Ministry of LGRD
error: Content is protected !!

My Shopping Cart