Detail

Home - ভ্রমণ কাহিনী - কেবিএমজেপির শিক্ষা সফর

কেবিএমজেপির শিক্ষা সফর

অস্ট্রেলিয়া, জাপান, থাইল্যান্ড, সিংগাপুর ও ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশ ভ্রমন ও শিক্ষা সফর করেছি। তবু কেবিএমজেপির এ শিক্ষা সফরটি আমার কাছে নানা কারণে  লেগেছে ভিন্ন আমেজের ও মজার। আমার কৈশোরের স্মৃতিপটের মানুষদের সাথে ঘুরা, আমার স্কুলের শিক্ষকদের সাথে ভ্রমন এবং নিজ এলাকার শিক্ষার মান উন্নয়নের কাজের সাথে সংযুক্ত হওযার এ গৌরবময় প্রয়াসে যুক্ত হতে পারা ছিল আমার সৌভাগ্য।ভ্রমণ নয় যেন নিজেকে উন্নয়ন, নিজেকে উন্নয়ন নয় যেন নিজের এলাকার উন্নয়নে সংযুক্ত হওয়া। তাই প্রতি পদক্ষেপে ছিল প্রাণের স্পন্দন আর মনের তীব্র ভালোবাসা।

 

শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত সৃজনশীল প্রচেষ্টা এবং স্থানীয় উদ্যোগ ও সম্পদ সমন্বয়ে কেবিএমজেপির শিক্ষার্থীদের শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে “শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য কেবিএমজেপি কমিটি। অনেক কার্যক্রমের একটি হচ্ছে শিক্ষক, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের নিয়ে শিক্ষা সফর।পাঁচটি গ্রাম নিয়ে একিভূত সমাজের সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে কেবিএমজেপি কমিটির আহবায়ক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যুগ্মসচিব জনাব জাফর সিদ্দিক স্যারের এবারের আয়োজনটি সত্যিই অসাধারণ ছিল।

 

বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও একটি সফল আয়োজন ছিল অন্যতম অর্জন।সুদুর কসবা থেকে গাজীপুর-ঢাকা ভ্রমনের এ দুদিনের আয়োজন সত্যিই চ্যালেঞ্জিং ছিল। বিশাল ব্যয়ের মধ্যে প্রায় সবটুকুই  সৌজন্যে হয়েছে। যার মুখ্য কৃতিত্ব কমিটির আহবায়ক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যুগ্মসচিব জনাব জাফর সিদ্দিক স্যারের। আলহাজ্ব আঙ্গুরা বাশার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জনাব নাসিরউদ্দিন, গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব এর বদান্যতায় শিক্ষাসফর হয়েছে মানসম্পন্ন, আরামদায়ক, উপভোগ্য এবং শিক্ষণীয়।এছাড়াও বাছির ভাই ও বদরুল আলম ভাইসহ অন্যরা সহযোগিতা করেছেন।

 

সাফারি পার্কে ফ্রি রাইড, সবুজ অভয়ারণ্যে বাঘ, সিংহ, ভালুকসহ প্রাণীদের সরাসরি দেখা, ময়ুরের পেখম আর রঙবেরঙের টিয়া পাখির সান্নিধ্যে আসা ছিল আরেকটি মন ছোঁয়া অভিজ্ঞতা। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে হাঁটা ছিল বাড়তি পাওনা। পার্কে  আরো ছিল হাতি, উল্লুক, বানর, ইমুসহ নানা প্রজাতির পশু ও পাখির জীবন্ত বিচরণ। এ ছাড়াও বিলুপ্তপ্রায় এবং শংকাকুল পশু ও পাখির সংগ্রহ রয়েছে বঙ্গবন্ধু পার্কে। পার্ক পরিদর্শনকালে হিংস্র প্রাণীর থাবা থেকে রক্ষা পেতে পার্কের খাঁচাসমৃদ্ধ বাসে ভ্রমণকালে যেন গা শিহরে ওঠে। হঠাৎ করে বাসের সম্মুখে বাঘের গর্জন। গাছের অগোচরে দেখা মেলে উল্লুক ও ভল্লুকের। এ যেন সত্যিই এক চোখ ধাঁধানো জীবন্ত ওয়াইল্ড লাইফ।

 

গ্রীনটেক রিসোর্ট এর লাক্সারিয়ার কক্ষ, সুস্বাধু খাবার – লাঞ্চ, ডিনার, ও নাস্তার স্বাদ যেন এখনো মুখে লেগে্ আছে।ফলপ্রসু শিক্ষা সেমিনার আমাদের সবাইকে নতুন করে উজ্জবীত করেছে।জোর উদ্যমে নব নব কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য অনুপ্রাণীত হয়েছি জনাব জাফর সিদ্দিক স্যারের বক্তব্যে এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব এর বক্তব্যে। আরো বক্তব্য দিয়েছিলেন কবি শামীম পারভেজ এবং প্রধান শিক্ষক জনাব আমজাদ হোসাইন স্যার।নিজের বিশ্বাসকে শাণিত করতে আমিও দুচার কথা বলেছি ফাঁকে। তাছাড়াও সুইমিং পুলে সাঁতার কাটা, সবাই মিলে রাতগভীরে গান-কৌতুক-অভিনয়ের পশরা উপভোগ আরো কত কী!

ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান যেন এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমাহার। শালবনে হারিয়ে যাওয়া, টাওয়ারে উঠে নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করা ছিল সত্যিই উপভোগ্য বিষয়। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান উদ্ভিদ প্রজাতি দিয়ে ব্যাপক ভাবে সমৃদ্ধ। এটি মূলত ক্রান্তীয় পতনশীল পত্রযুক্ত বৃক্ষের বনভূমি বলে পরিচিত।

ঢাকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যাদুঘরে প্রবেশ করে গ্যালারিতে হেঁটে আশ্চর্য সব বিষয়ে মনোনিবেশ ও জ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ করা যেন বিজ্ঞানে হারিয়ে যাওয়া।মজার আয়না, মহাকাশ, বায়োস্কোপ, টেলিস্কোপ, ভর ইত্যাকার কতশত মজার এক্সপেরিমেন্ট। সেইসাথে ৬ডি মুভি দেখার বিরল সুযোগ। রহস্য আর ভয়ংকর অভিজ্ঞতার এ মুভি আমরা কেউ ভুলবোনা।

 

প্রতিটি স্পটে ডাকবাংলো বা রেস্ট হাউজ প্রস্তুত ছিল আর প্রয়োজনীয় লোকবল দিয়ে আমাদের সেবার জন্য প্রস্তুত ছিল। সে এক অসাধারণ প্রাপ্তি।

 

বিনোদনের এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশে উৎসবমুখর শিক্ষা সফর সাফল্যমণ্ডিত করতে শিক্ষকমণ্ডলী, ছাত্রছাত্রী, অভিভাবকসহ যারা সহযোগিতা করেছেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। বিশেষ করে জনাব আমিরুল ইসলামকে তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ও সমন্বয়ের জন্য ধন্যবাদ জানাই।বিশেষ করে জনাব জাফর সিদ্দিক স্যারের নেতৃত্ব, পরিকল্পনা, পরিচালনা, সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার ও অনুকরণীয়। সবশেষে আমাকে এ সফরে অন্তর্ভূক্ত করায় আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা।

 

শিক্ষা সফরের এ উদ্যোগ তথা শিক্ষার মান উন্নয়নে এ প্রচেষ্টা সত্যিই চমৎকার এবং প্রশংসাযোগ্য। আমাদের সকলের উচিত এ উদ্যোগের সাথে একাত্ম হওয়া এবং সর্বোতভাবে সহযোগিতা করা। এরকম উদ্যোগ যেন বাংলার প্রতি গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে সে শুভকামনা করছি।

-০১-১০-২০১৭,  (জমশ্বেরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯৯৪ ব্যাচ)

-ড. সফিকুল ইসলাম।

(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )

Share Now
Author

Dr. Shafiqul Islam

(BBA, MBA, DU; Mphil, Japan; PhD, Australia) Deputy Secretary, Government of Bangladesh. Chief Executive Officer, Cumilla City Corporation, Local Government Division, Ministry of LGRD
error: Content is protected !!

My Shopping Cart