Detail

Home - ভ্রমণ কাহিনী - আইডি কার্ড ও দ্রুতসেবা

আইডি কার্ড ও দ্রুতসেবা

১। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর স্টুডেন্ট আইডি কার্ড করতে হয়। কার্ড করতে নতুন ছাত্র মনি অফিসে গেল।কড়া রোদে হেঁটে আসার কারণে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।অফিসে ঢুকেই আইডি কার্ডের আর্জি জানায় সে।অফিসের কেরাণী ভদ্রলোক ব্যাস্ততার অজুহাতে চোখ তুললেননা। না তাকিয়েই গম্ভীর স্বরে বললেন “ভর্তি রশিদ, দুকপি ছবি, ও জন্মসনদ ইত্যাদি লাগবে”।সঙ্গে ছবি ছিলনা।তাই পরদিন যাবার পর বলা হলো পাসপোর্ট সাইজ ছবিতে চলবেনা। স্ট্যাম্প সাইজ ছবি লাগবে। আগে বলেননি কেন যে ছোট সাইজ ছবি লাগবে? নরম সুরে জানতে চায় মনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন আর আইডি কার্ডে ছোট ছবি লাগবে এটা জানেন না? উষ্মা প্রকাশ করেন অফিসের ভদ্রলোক। পরদিন যাবার পর জমা নেয়া হলো এবং বলা হলো ”বড় স্যারের স্বাক্ষর নিতে দেরি হবে। আগামীকাল আসবেন। পেয়ে যাবেন।” অগত্যা কী আর করা। চতুর্থ দিন গিয়ে মনি বহু কাঙ্খিত স্টুডেন্ট  আইডি পেল। (সচিবালয়ের পাস/ অস্থায়ী কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে আমার অভিজ্ঞতা এবং শ্রান্তি বিনোদন ছুটি অনুমোদনের ক্ষেত্রে আমার অভিজ্ঞতা অনুরুপ।)

২। অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটিতে প্রথম দিন গেলাম। স্টুডেন্ট আইডি আনার জন্য।অফিসে ঢুকতেই মিস্টি সুরে ম্মার্ট ভদ্রমহিলা জানতে চাইলো “হ্যালো, হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ?” মুখজুড়ে অবারিত হাসি (মুখের বলিরেখার কারসাজি হতে পারে!)।তবে ভদ্রতা, নম্রতা, আই অ্যাম অ্যাট ইউর সার্ভিস-টাইপ-মনোভাবটি কিন্তু কারসাজি নয়। আমার স্টুডেন্ট আইডি দরকার বলে জানালাম। পাসপোর্ট চাওয়া হলো ।আমি শুক্রবারের নামাজে গিয়েছিলাম বলে পিঠব্যাগ নিয়ে যাইনি।মসজিদের কাছেই অফিস হওয়াতে চলে এসছিলাম। অপ্রস্তুত আমি মিনমিন করে বললাম ’সঙ্গে নেই’।স্টুডেন্ট আইডি নম্বর জানতে চাইলো। মনে করার চেষ্টার ভাণ করে বললাম মনে নেই। মোবাইল ফোনে হাতড়াতে হাতড়াতে বললাম ইমেইল চেক করে বলতে পারবো। ”নো নিড, জাস্ট টেল ইউর নেইম” কর্মব্যাস্ত মহিলার জবাব। নাম বলতেই মহিলা পিসিতে সার্চ দিয়ে সব বের করে ফেললো। আমার সঙ্গে ছবি আছে কিনা জানতে চাইলো। বললাম নেই। ভদ্রমহিলা পিসির সাথে সংযু্ক্ত একটি ক্যামেরার সামনে দাড়াতে বললো।দাড়ালাম।  ” ইউ ক্যান স্মাইল ইফ ইউ উইশ, নট ম্যান্ডেটরি”!ভদ্রমহিলা হালকা কৌতুকস্বরে বললেন। আমার স্মাইলিং ফেসের স্মাইল মিলিয়ে যাবার আগেই মেয়েটি বললো ওকে ডান। হেয়ার ইউ আর, টেইক ইউর কার্ড! স্বগতোক্তির মতো আমার মুখ ফসকে বেরিয়ে এল ’ইটস সো ফাস্ট! এমেইজিং!’ তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে কার্ডটি ও কার্ডে আমার স্মাইলিং ফেসের ছবিটি দেখতে দেখতে বিদায় নিলাম।পরে ভাবলাম আমরা ও তাঁরা, কত পার্থক্য!

অনেকে বলবেন যে, এরকম অনলাইন ফেসিলিটিজ দিলে বাংলাদেশেও সম্ভব। আমার অভিজ্ঞতা ভিন্ন। বিষয়টি শুধু অনলাইন বা যন্ত্রের নয়। মানসিকতারও। সম্প্রতি একটি ব্যাংকে গেলাম। আমার একাউন্টের ব্যালেন্স জানার জন্য। সাথে চেকবুক বা জমাবুক ছিলোনা। নাম দিয়ে বের করতে বললাম। তিনি যে আচরণ করলেন তা এখানে বলার মতো নয়। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে আমাদের মানসিকতার উন্নতিও দরকার। আর সাথে দরকার ডেলিগেশন অব পাওয়ার। আইডি কার্ডের জন্য ভিসি বা বিভাগের চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের অপেক্ষা করতে হলে সার্ভিস প্রম্পট হবেনা।তাছাড়া তাঁদের সেবা বাজেট ও আমাদের সেবা বাজেটে অনেক তফাৎ।  ওভারহেড কস্ট (উচ্চ বেতন ও অফিস ইকুইপিম্যান্ট ম্যানেজম্যান্ট) বাজেটিংও বাড়ানো দরকার।

(আইডি কার্ডের সেবার উদাহরণ নমুনা মাত্র।বাংলাদেশের সরকারি বেসরকারি অফিসের অনেক সেবার সাথে এরুপ সাদৃশ্যপূর্ণ ঘটনা/অভিজ্ঞতা আমাদের অনেকেরই রয়েছে।নাকি?)

-ড. সফিকুল ইসলাম। (লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )

Share Now
Author

Dr. Shafiqul Islam

(BBA, MBA, DU; Mphil, Japan; PhD, Australia) Deputy Secretary, Government of Bangladesh. Chief Executive Officer, Cumilla City Corporation, Local Government Division, Ministry of LGRD
error: Content is protected !!

My Shopping Cart